Saturday, 8 October 2016

স্মৃতির পূজা এখনো অমলিন

হোয়াটসঅ্যাপে খুব সকালে তুলি আমাকে শিউলি ফুলের ছবি পাঠিয়েছে। চোখ বন্ধ করে কল্পনায় ছবি থেকে শিউলির গন্ধ শোকার পাগলামি করেই ওকে ফোন দিলাম।

'কিরে কই থেকে কুড়লি ,চেয়ারম্যানের সেই শিউলি ফুলের গাছটি এখনো কি আছে ?' তুলি বললো -
'ধুস ঐটা কবেই কেটে ফেলেছে ,এটা আমাদের বাড়ির গাছ। তুলসী তলায় যেটি লাগিয়েছিলাম   এই প্রথম ফুল ফুটেছে।সকালে উঠে দেখি তুলসী তলা শিউলিফুলে সাদা হয়ে গেছে। তুমি পুজোয় আসছো তো ?'
'আমি বললাম কবেরে দূর্গা পূজা ?'
'এমা তুমি জানোনা ,গতকাল মহালয় হয়ে গেলো। আমরা সবাই টিভিতে দেখলাম। জানো মেজদাদা মহালয়ায় এবার ষ্টার জলসায় আর জি বাংলায় দূর্গা কে সেজেছে ?......'
ও বলে চলেছে ,আমি লাইন কেটে দিলাম।
এরই মধ্যে শরৎ চুপি চুপি চলে এসেছে টের পাইনি। এই ইট কাঠ পাথরের শহরে সময়গুলো ঠিকই তার নিজের গতিতে চলে যায় ,আমরা কেউ বুঝতেই পারিনা। বাংলাদেশ থেকে সম্পুর্ন্ন ভিন্ন প্রকৃতি মালয়েশিয়ার। সারাবছর একটিই ঋতু। প্রায়ই দেখি বিলাই কুকুরের বৃষ্টি তারপর আবার ফঁকফঁকা। এখানে শারদ আসেনা কাঁশবনে সাদা ফুলের ঢেউ খেলানো বাতাস কিংবা সুরভিত শিউলির গন্ধ নিয়ে। হেমন্ত আসেনা কৃষকের কাস্তে হাতে রোদে পোড়া মুখের এক চিলতে হাসি নিয়ে। ভাঁপা পিঠা পুলির শীতের রাত কিংবা আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে ভ্রমর গুঞ্জরনে আর শিমুল কৃষ্ণচূড়ার লাল হাঁসিতে আসেনা বসন্ত।কিন্তু ঋতু চক্রের আবর্তে ছয় ঋতুর দেশে শারদ তার নিজস্য স্বভাব নিয়ে হাজির আর তার সাথে হাজির বাঙালির চিরন্তন ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজা।এই উৎসব শুরু হতো মহালয়ার মাধ্যমে।আর মহালয় মানে ছিল শিশির ভেজা ভোরে আকাশবাণী থেকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী তথা চন্ডি পাঠ।কতদিন শুনিনি উদাত্ত কন্ঠে সেই চন্ডি পাঠ অথচ এক সময় সারাবছর অপেক্ষা করতাম তার কন্ঠে  মহিষাসুর মর্দিনী শুনবো বলে। ভোরবেলা সাড়ে চারটার আগে ঘুম থেকে উঠে বাবার ন্যাশনাল প্যানাসনিক রেডিওতে  আকাশবাণী টিউন করে বসে থাকতাম গায়ে চাদর জড়িয়ে মাদুর পেতে। মহালয়া শুরু হলে ফুল ভলিউমে শুনতাম অন্যদেরও শুনাতাম। মূলত এই দিন থেকে শুরু হতো আমাদের দূর্গা পূজার আনন্দ। সেদিন থেকে মা'র কাছে বার বার জানতে চাইতাম কবে পূজার জামা কাপড় কিনতে যাচ্ছি ফুলবাড়ীতে।মা নারিকেল কুরে নাড়ু বানায়,মুড়ি মুড়কি ,মোয়া তৈরিতে ব্যাস্ত থেকেও আমার কথার উত্তর দেয় বলে- 'এইতো পাট বিক্রি হলেই যাবো।' আমাদের আবদার ছিল মা কেন্দ্রিক। বাবা ছিল প্রচন্ড রাগী তাই মা বাবাকেও কোনো কিছু বলতে সাহস পেতো না। বাবার আশেপাশে ঘুরা ঘুরি করলেও টের পেতাম না তার মনের কথা ,ভাবতাম বাবার হয়তো এমনই হয়। মা ছাড়াও আরো দুইজন ছিল যাদের কাছে আমরা ভয়ডরহীন সব কিছু বলতে পারতাম এক প্রবাস জ্যাঠা আর অন্যজন ভজা দা। দুইজনেই আমাদের অনেক পুরোনো কাজের লোক। ভজাদাকে জিজ্ঞেস করতাম-
'পাটের দাম কি বেড়েছে ,কবে আমাদের পাট বিক্রি করতে নিয়ে যাবে ?
ভজা'দা আমাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া কথা বলতো -
'এবার কোনো পাট বিক্রি হচ্ছে না কেননা পাটের দাম নেই ,তাই এবার আর হাটে পাট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।'
আমি বিমর্ষ হয়ে মা দূর্গা কে ডাকতাম। মন প্রাণ দিয়ে ডেকে বলতাম-
'মা দূর্গা পাটের দাম বেড়ে দাও নইলে পুজোর জামা কাপড় কেনা হবেনা ,আর নতুন জামা কাপড় না পরে মামার বাড়িতে পুজো দেখতে কিভাবে যাবো ?ময়নাদি,হাসি,পাপ্পু,পঞ্চম,কেয়া ওরা কত সুন্দর সুন্দর পুজোর জামা পরে ঘুরবে আর আমি ?
মা দূর্গা প্রতি বছর আমার কথা শুনতো। পাটের দাম বাড়ুক আর না বাড়ুক প্রতি বছর ঠিকই আমাদের পাট বিক্রি হতো। রাতে ডিসপেনসারি থেকে বাবা ,প্রবাস জ্যাঠা,ভজা দা একসাথে ফিরলে শুরু হতো পাট মাপা। হারিকেন জ্বালিয়ে পাট মেপে মেপে সেগুলোকে সুন্দর করে ভাঁজ করে বাধা হতো।মাপামাপি শেষ হলে প্রবাস জেঠা গরুর গাড়ির চাকা লাগিয়ে ঠিক থাকে করে রেখে চলে যেত। ভোরবেলা অন্ধকার থাকতেই বাবা আর প্রবাস জ্যাঠা রওনা দিতো হাটে। পরেরদিন বাবা আমাদের নিয়ে যেত জামা কাপড় কিনতে। সবার জন্য একসেট জামাকাপড় কিনলেও বাবা কখনোও নিজের জন্য কিনতো না।আমাদের গ্রামের আশেপাশে কোথাও পূজা হতোনা। তাই আমাদের পূজা ছিল মামাবাড়ি কেন্দ্রিক। যেদিন  চার পুত্র-কন্যা নিয়ে হিমালয় থেকে পিতৃলোকে মর্ত্যে গমন করে দেবী দূর্গা ঠিক তখন আমার মা'ও আমাদের কে নিয়ে তার বাপের বাড়িতে রওনা দিতো।দেবী দুর্গার মতো চারটি বাহন ছিলোনা, বাহন বলতে মামা বাড়িতে যাওয়ার একটিই পথ ছিল সহজ তা হচ্ছে দুই মাঝি আলা ছৈয়ের নৌকা। স্রোতস্বিনী ছোট যমুনার স্রোতের বিপরীতে সারাদিন দাঁড় বেয়ে চলত সেই নৌকা। আমি বড় বড় চোখে নদীর দুই পারে সাদা কাশফুলের বন ,ঘন জঙ্গল আখ ক্ষেত,জেলেদের ডিঙি নৌকায় মাছ ধরা ,নদীর পারে ছোট ছোট গ্রামের দুরন্ত ছেলেমেয়েদের উঁচু পার থেকে লাফিয়ে পড়া আর দূর কোনো গ্রামের পুজো মন্ডপ থেকে ভেসে আসা ঢাকের শব্দ শুনতে শুনতে সন্ধ্যের আগেই পৌঁছে যাই গোপালপুর মামা বাড়িতে।নৌকা থেকে নেমেই দৌড়ে যেতাম পূজা মন্ডপে। সাদামাটা সেই পূজা মন্ডপ রঙিন কাগজ আর বাহারি বেলুন দিয়ে সাজানো টিনের ছাপড়ার সেই মন্দির আলোকিত  হতো হ্যাজাক কিংবা জেনারেটরের আলোয়। স্মৃতির সেই পূজা এখনকার লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায়ে সেই পুজোকে ম্লান করতে পারেনি কখনোই ।

Thursday, 8 September 2016

পারফিউম -একজন খুনীর গল্প

সুরের যেমন সাতটি মৌলিক নোট আছে ,যা দিয়ে তৈরী হয় শ্রুতি মধুর নানা সুর, তেমনি রং এর ও রয়েছে কয়েকটি মৌলিক রং। তা দিয়েই চিত্র শিল্পীরা তৈরী করে নানা ধরনের চিত্রকর্ম। অনুরূপ পারফিউমের রয়েছে নিজস্ব মৌলিক কিছু স্তর বা নোট। টপ নোট ,মিডল বা হার্ট নোট ,বটম বা বেজ নোট আর ব্রিজ। কয়েকটি সুগন্দির মিশ্রনে তৈরী হয় পারফিউম। প্রথমে টপ নোট নাকে এসে ধাক্কা দিয়ে মনকে উতলা করে তারপর ধীরে ধীরে বেজ নোটের সহায়তায় তা ছড়িয়ে পরে। এই বেজ বা বটম নোট হল সুগন্ধির ভিত্তি আর ব্রিজ এর কাজ পারফিউমকে বিভিন্ন সময়ে সন্তরনে সহায়তা। পারফিউম এক্সপার্ট ছাড়া সুগন্ধির এই নোট ধরা আমাদের সম্ভব নয়। এরকমই এক গন্ধ বিশারদ তৈরী করে ফেলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পারফিউম ,তাও আবার মানুষের শরীর থেকে। অ্যাম্বারগ্রিজ বা তিমি মাছের বমি কিংবা হরিণের নাভিমূল কস্তুরী থেকে পৃথিবীর সেরা পারফিউমগুলো তৈরী হয় সবাই জানে কিন্তু মানুষের দেহ থেকে ? বাস্তবে অসম্ভব হলেও সেলুলয়েডের ফিতায় তা সফল ভাবে করে দেখিয়েছে জার্মান পরিচালক টম টাইকার।  সিনেমাখোর রূপক আমাকে কয়েকটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে প্রথমেই এই পারফিউম মুভিটা দেখতে বলে। ২০০৭ সালে কোনো এক পত্রিকায় পড়েছিলাম এই সিনেমার কথা। ধরেই নিয়েছিলাম শেষ দৃশ্যে যেহেতু কয়েকশো মানুষের নগ্ন দৃশ্যে জুড়িয়ে দিয়েছে পরিচালক সেহেতু ওটা ১৮+ দের সিনেমা ।মাঝখানে দীর্ঘ বিরতির পর যখন মুভিটি দেখতে বসি একবার মনে হচ্ছিলো এটি একটি আধো ভৌতিক সিনেমা পরক্ষনে মনে হচ্ছিলো এটি একটি সিরিয়াল কিলারের কাহিনী ,তারপর দেখি অদ্ভুত এক প্রখর ইন্দ্রিয় অনুভূতির গল্প। প্যাট্রিক সাসকাইন্ড তার বিখ্যাত উপন্যাস 'পারফিউম' অবলম্বনে টম টাইকার  তৈরী করে ১৪৭ মিনিটের তার সেরা মুভি পারফিউম দ্যা স্টোরী অব আ মার্ডারার।  প্রযোজক ব্রেন্ড ইঞ্চিণজার মূল কাহিনী সাসকাইন্ডের কাছ থেকে কেনার পরই বিরকিন কে নিয়ে চিত্রনাট্য লিখে ফেলে। কিন্তু মূল চরিত্র খুঁজে না পাওয়ায় নির্মাণ করতে অনেকটা সময় চলে যায়। অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর ২০০৫ সালে স্পেন ,জার্মানি এবং ফ্রান্সের লোকেশনে চিত্রধারণ শুরু হয়। সেই সময় জার্মানির সর্বোচ্চ বাজেটে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নির্মিত হয় পারফিউম দ্যা স্টোরী অব আ মার্ডারার।
গ্রানুইলির চরিত্রে রূপদানকারী বেন উইসশো সম্পূর্ন চরিত্রটিকে তুলে ধরেছেন অসাধারন দক্ষতায়।বিশাল মাছের বাজার, প্রচুর মানুষ আর পোষাক আর অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফি খুব সহজেই আঠারোশ  শতাব্দীর ফ্রান্সকে ফুটিয়ে তুলেছেন টম টাইকার২০০৬ সালে মুক্তির পর এটি আয় করে নেয় ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১৪৭ মিনিটের এই মুভিটির শুরুতে দেখি প্যারিসের এক মাছ বাজারের মধ্যে জন্ম নেয়া গ্রানুইলিকে তার মা অনাদরে ফেলে রেখেছিল জন্মের পরই মারা যাবার জন্য।কেননা পিতৃপরিচয় দেওয়ার মত কোনো কিছু ছিলোনা ওই মহিলা জেলের। ঘটনাচক্রে সেখানে মাছ কিনতে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তা সদ্য ভুমিষ্ট গ্রানুইলের কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।কিন্তু মাছের আড়তে জন্ম নেওয়া ছোট্ট গ্রানুইল না মরে ফাঁসির দড়িতে মরতে হয় তার মাকে। গ্রানুইলের ঠাঁয় হয় এতিমখানায়।আষ্টে গন্ধওয়ালা মাছের আড়তে জন্ম নেওয়া গ্রানুইল পায় গন্ধ শোকার এক বিশেষ ক্ষমতা।১৭ বছর এতিমখানায় থাকার পর তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় এক চামড়ার কারখানায়।কঠোর পরিশ্রমে কেটে যাওয়া গ্রানুইল খুঁজে ফেরে সবকিছুর গন্ধ এমনকি জলের তলের গন্ধও সে বুঝে ফেলে এক নিমিষেই। ঘটনা চক্রে একদিন সে সময়কার প্যারিসের নামকরা পারফিউম ব্যাবসায়ী বালদিনির সাথে।বালদিনি তাকে সেই চামড়া ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে চড়া দামে কিনে নেয়। গ্রানুইল তার বর্তমান মনিবের কাছ থেকে সুগন্ধি বানানোর প্রক্রিয়া শেখার পর সে তৈরী করতে থাকে নানা প্রকারের পারফিউম আর অন্যদিকে বালদিনি উপার্জন করতে থাকে কাড়ি কাড়ি টাকা। একদিন সে পারি জমায় গ্রাসের উদ্দেশ্যে যেখানে তৈরী হয় পৃথিবীর বিখ্যাত সব সুগন্ধি। বিশাল সব ফুলের বাগান হাজারো শ্রমিকের শ্রমে তৈরী হচ্ছে সুগন্ধি সমূহ।সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সুগন্ধি আবিষ্কার করবে। সুন্দর সুগন্ধি আবিষ্কারের নেশা তাকে পেয়ে বসে । একটার পর একটা চেষ্টা সে করে যেতে থাকে সে কিন্তু তার মনঃপুত হয়না কোন সুগন্ধি । একসময় সে আবিষ্কার করে নারীদেহের এক মোহনীয় সুগন্ধ।তার ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় সুন্দরী কুমারী নারীদেহ থেকে কিভাবে সেই সুগন্ধকে ধরে রাখবে। টাকার বিনিময়ে অনুমতিক্রমে এক নারীর শরীর থেকে সুগন্ধি তৈরী করতে চায় কিন্তু তাতে সেই নারী রাজি না হলে তাকে হত্যা করে এবং বিশেষ এক গাদের সাহায্যে শরীর থেকে চেঁছে নেয় শরীরের নির্যাস আর তৈরী করে সুগন্ধি। হয়ে উঠে এক সিরিয়াল কিলার। শহর জুড়ে শুধু কুমারী মেয়েরা নিখোঁজ হতে শুরু করলো এবং তাদের নগ্ন লাশ বিভিন্ন জায়গায় পরে থাকতে লাগলো। শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে , যারই ঘরে কুমারী মেয়ে আছে তার মাঝেই কোনপ্রকার স্বস্তি নেই । একের পর এক হত্যা , অনেকভাবে চেষ্টা করেও কোনো কুলকিনারা করে উঠতে পারছেনা।এদিকে শহরের প্রধান তার কুমারী মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কে আছে।গ্রানুইল তার সেরাটা তৈরী করার শেষ পর্যায়ে আসে। তার আর প্রয়োজন একটি কুমারী মেয়ের এবং তার নজর পরে শহর প্রধানের সুন্দরী মেয়ের দিকে। কিন্তু শহর প্রধান  তার মেয়েকে নিয়ে বহুদূরে চলে যায়। দূর থেকে গন্ধ শুকে গ্রানুইল ঠিকই হাজির হয় তাদের কাছে। শহর প্রধান নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনা তার একমাত্র মেয়েকে। গ্রানুইল যখন তৈরী করে ফেলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পারফিউম ঠিক তখুনিই সে ধরা পরে যায় রক্ষীদের হাতে। হাজার হাজার জনতা তার প্রকাশ্য ক্রূশ বিদ্ধ করা দেখতে এসেছে আর গ্রানুইল তখন তার সেই নিজের কাছে লুকিয়ে রাখা পারফিউমের মুখ খুলে ফেলে। তারপর!!!
তারপর কি হলো জানতে চাইলে দেখতে পারেন পারফিউম: দ্যা স্টোরী অব আ মার্ডারার।
ছোট্ট গ্রানুইলের গন্ধ শুকা
  

Sunday, 4 September 2016

রবার্ট দ্য ডল-একটি অভিশপ্ত পুতুল

পুচকি ন্যান্সি অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন সে ক্লাস ফোরে পড়ছে। গত তিন বছর থেকে তার একটাই চাওয়া বড় একটি বার্বি ডল। গত ডিসেম্বরে একটি ট্যাব কিনে সেটার মধ্যে হরেকরকমের কার্টুন গেম আর ছোটদের ইংরেজি শেখার অ্যাপস ডাউনলোড করে দেয় যাতে করে পুতুল নিয়ে খেলার চিন্তা ভুলে যায়। অনেকদিন পর গতকাল ফোন দেই ,দিয়েই শুনি সেই পুরোনো গান -দাদা কবে আসছো ?আমার বার্বি ডলের কথা তোমার মনে আছে? সত্যি কথা বলতে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ছোটদের হাতে এই খেলনা পুতুল ,পিস্তল  খেলনা হাড়ি -পাতিল নিয়ে খেলা একদম পছন্দ করিনা। আমার কাকা ডাঃবিকাশরঞ্জন দাস বলতো ,শিশুদের হাতে এসব খেলনা এলেই নাকি তাদের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন আসে এবং তারা ছোট থেকেই সেসবের স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয়। কতটুকু সত্য আজকে একটু হলেও দেখছি। সেই কাকুর ছেলে তুনক সারাদিন বিমান নিয়ে খেলত। তার দখলে ছিল রাজ্যের সব খেলনা  প্লেন। ছোট্ট তুনক এখন অনেক বড় হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম সে এখন কানাডার মাউন্ট রয়েলে এভিয়েশন নিয়ে পড়ছে। আমার বোন রুমি যার ডজন ডজন খেলনা পুতুল ছিল। পুতুলের বিয়ে দেওয়া ,পুতুল সাজানো নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত।  এখন নিজের সুন্দর সংসার আর নিজের পার্লার নিয়ে ব্যাস্ত। আর পাশের বাড়ির রুবেল শুনেছি এখন সে এলাকার মাস্তান। আমরা বড় হয়েছি লোকজ আর মৌসুমী খেলা গোল্লার ছুট,ডাংগুলি ,লুকোচুরি ,লাঠিম আর ঘুড়ি উড়েই বড় হয়েছি। এসব খেলনা এখন অতীত। এখনকার হরেকরকমের খেলনা যেমন আছে তাদের নামের বাহার তেমনি নামি  দামি বিভিন্ন ব্র্যান্ড। ন্যান্সির বার্বি ডল হয়তো এরকমই একটি ব্র্যান্ড। বার্বি ডল কিংবা কোনো পুতুলের কথা আসলেই আমার ভয়ঙ্কর  ভুডু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকের কথা মনে পরে যায়, একটি পুতুল রবার্ট অন্যটি অ্যানাবেল। হলিউডের জনপ্রিয় মুভি চুকি আর দ্য কনজুরিং সিনেমার বদৌলতে রবার্ট দ্য ডল আর অ্যানাবেল কে সবাই চেনে। এই  দুই পুতুল এখনো একটি অমীমাংসিত রহস্য। কারো কারো কাছে স্রেফ গাঁজাখুরি গল্প আবার কারো কাছে ভয়ঙ্কর কালোবিদ্যা বা ভুডুজম। এই ভুডুজম কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স শহরে ভুডু জাদুঘর যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
মনে করা হয় ১৭১৯ থেকে ১৭৩১ সালে আফ্রিকা এবং হাইতি থেকে ধরে আনা কৃষ্ণাঙ্গ দাস-দাসীদের মাধ্যমে সভ্য জগতে ভুডু চর্চার আবির্ভাব হয় এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স শহরকে ভুডু চর্চার পীঠস্থান বলা হয়ে থাকে। কথিত আছে হযরত মুহাম্মদ(সা:) এর বিরোধী পক্ষরা তার পুতুল প্রতিমূর্তি তৈরী করে তাতে সুচ ঢুকিয়ে মন্ত্রপূত করার পর সেটা রেখে দিয়েছিলো মরুভূমির এক কূপের মধ্যে ,এতে করে মুহাম্মদ(সা:) শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করেছিল এবং সেই পুতুল উদ্ধারের মাধ্যমে তিনি অসুস্থ অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করেন ,এমনটিই জানা যায় বিভিন্ন ইসলামিক বই থেকে।
ভুডু পুতুল  তৈরী করা হয় দুই টুকরো কাঠি ,কাপড়চোপড় এবং এটি যার উপর প্রয়োগ করা হবে ,সেই ব্যাক্তির চুল ,নখ ,রক্ত বা চামড়ার কিছু অংশ দিয়ে। শোনা যায় যে ভূডূবিদ্যার সাহায্যে কবরের লাশ নাকি জ্যান্ত করে তাকে দিয়ে গোলামের মত খাটানো যায়। (এসব সোনা কথা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস একান্তই আপনার বিষয়)।  ধারণা করা হয় কিংবদন্তি ভয়ঙ্কর পুতুল রবার্ট কিংবা অ্যানাবেল তৈরী হয়েছে ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানদের হাতে। রবার্ট দ্য ডল বা ভুতুড়ে পুতুল বর্তমানে ওয়েস্ট ফ্লোরিডা মার্টেল্লো যাদুঘরে রয়েছে।আর অন্যদিকে অ্যানাবেল রয়েছে ওয়ারেন এর অকাল্ট মিউজিয়াম। রবার্ট দ্য ডলের অশুভ প্রভাব বিস্তার শুরু গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে ১৯০৬ সালে। যখন শিল্পী রবার্ট ইউজেন অটো ফ্লোরিডা শহরের কেন্দ্রে বিখ্যাত আর্টিস্ট'স হাউস এ বসবাস শুরু করেন।প্রচুর বিত্তশালী ছিল অটো পরিবার।ফ্লোরিডার জীবনে বেশ মানিয়ে গেলেন তারা। স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে এই বাড়িতে থাকত তাদের ছোট্ট ছেলে আর বেশ কিছু চাকর বাকর। অটোরা নিয়ম কানুনের ব্যাপারে খুব কড়া ছিলেন।একদিন মিসেস অটোর বিছানায় বসার জন্য চাকরি গেল জ্যামাইকান সেবিকার। তবে যাবার আগে গেনেকে সে দিয়ে গেল হাতে বোনা একটা স্টাফ করা পুতুল।লোকে বলে জ্যামাইকান এই নারী ভুডু আর কালো জাদুর কৌশল জানত। পুতুলটা বানানো হয় গেনের চেহারার আদলে।ছোট্টগেনে খুব পছন্দ করলো সেটি। পুতুলটার নাম দেওয়া হলো রবার্ট,গেনের নামেরই প্রথম অংশ এটা। জ্যামাইকান সেবিকার কাছ থেকে পুতুলটা নেওয়ার পর থেকে আর ওটাকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিল না ছোট্ট গেনে। সবজায়গাতেই পুতুলটাকে নিয়ে যাওয়া চাই তার।শহরের লোকেরা প্রায়ই মিসেস অটো আর ব্যক্তিগত পরিচারকদের সঙ্গে গেনে আর রবার্টকে শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখতে লাগল। খাবার সময় গেনের পাশেই নিজের ছোট্ট চেয়ারটায় বসে রবার্ট।রাতে ঘুমে ঢুলতে থাকা ছেলেটার পাশে শুইয়ে দেওয়া হয় রবার্টকে।তবে ধীরে ধীরে গেনে আর তার পুতুলের সম্পর্ক একটা অশুভ দিকে মোড় নিল। গেনেকে তার খেলার ঘরে লাফালাফি,হৈচৈ করতে দেখা যায় কিছুক্ষন। তারপর মুহূর্তের বিরতি। এবার নিচু গলায় কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে আসে পরিচারকদের কানে। প্রথমে গেনের বালকসুলভ কন্ঠ,তারপরই সম্পূর্ন ভিন্ন একটা কন্ঠ। এই সময় থেকেই অস্বস্তি শুরু হলো বাড়ির চাকর-বাকর এমনকি মিসেস অটোর মধ্যেও।  কখনো কখনো উদ্বিগ্ন মা আবিষ্কার করেন ছেলেটা জড়সড় হয়ে কামরার এক কোনায় বসে আছে। আর পুতুলটা বিছানায় কিংবা নিজের চেয়ারে বসে যেন একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ির জিনিসপত্র মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যেতে লাগল। মনে হয় যেন কেউ ওগুলো ছুঁড়ে ফেলেছে। বাবা মা খুব বকাঝকাও করলো তাকে। তবে প্রতিবারই সে সাফাই গায়,রবার্ট ওটা করেছে। পুতুল নড়তে-চড়তে শিখে,একটার পর একটা অকান্ড ঘটাচ্ছে এটা কে-ই বা বিশ্বাস করবে ?গেনের এক দাদীর পরামর্শে রবার্টকে গেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চিলেকোঠার একটা বাক্সে বন্দি করে রাখা হলো। তারপরের রাতেই বুড়ো মহিলাকে তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। তবে ভদ্রমহিলার অপ্রত্যাশিত এই মৃত্যুর পরপরই রবার্ট আবার ফিরে পেল গেনের সঙ্গীর জায়গা। তারপর থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ওটা থাকতে লাগল এই বাড়িতে। গেনে অটো বিয়ে করার পর তাদের সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না। একসময় উন্মত্ত আচরন শুরু করল মিসেস অটো। তারপর একদিন রহস্যময়ভাবে মারা যায়।একসময় মৃত্যু হলো গেনে অটোর।নতুন মালিক বাড়িটায় আসার পর আবার রবার্টের জায়গা হলো চিলেকোঠা একটা বাক্সে। কিন্তু প্রথমবারের মতই এই ব্যবস্থায় খুশি হতে পারল না অশুভ পুতুলটা। রাতগুলো দুর্বিষহ করে তুলল সে পরিবারটির জন্য। বাড়ির এখানে সেখানে তার উপস্থিতির নজির রাখতে শুরু করল। ঘটাতে থাকল একটার পর একটা অঘটন। দেরি না করে বাড়ি ছাড়লেন তারা। আর রবার্টের ঠাঁই হলো নতুন ঠিকানা, ওয়েস্ট ফ্লোরিডা মার্টেল্লো যাদুঘরে। যেখানে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয় তাকে। এখনো জাদুঘরে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা বলেন,রবার্ট সম্ভবত তার নতুন বাড়ির সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি।এক নারী পর্যটক তার চোখের সামনে পুতুলটার মুখের ভঙ্গী দেখে আঁতকে ওঠেন। ঠিক আগের মুহূর্তে ওটা হাসছিল,তারপরই বিরক্ত হয়ে ভ্রুকুটি করে। আবার কোনো কোনো পর্যটক এমনও দাবি করেছেন বিখ্যাত পুতুলটার ছবি তোলার পর কালো ফ্রেম ছাড়া আর কিছুই পাননি। রবার্ট যে জায়গাটায় এখন আছে সেখানে আলোর অবস্থা বেশ খারাপ। এত কম আলোতে ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন।কর্তৃপক্ষ জায়গাটকে আলোকিত করার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নিলেও কী এক অজানা কারনে সুবিধা হয়নি। আবার এধরনের গুজবও আছে ছবি তোলার আগে পুতুলটার কাছে ভদ্রভাবে অনুমতি চাইতে হয়। তা না হলে যে ছবি তুলবে তার উপর নেমে আসে রবার্টের অভিশাপ ।
রবার্ট দ্য ডল

Friday, 2 September 2016

শৈশবের যুদ্ধের গল্প থেকে স্নাইপারের কিংবদন্তি ভাসিলি জেইতসিভ পর্যন্ত


শৈশবের যুদ্ধের গল্প থেকে স্নাইপারের কিংবদন্তি ভাসিলি জেইতসিভ পর্যন্ত**  

শৈশবে বাবার কাছে শুনতাম প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আর ভিয়েতনামের যুদ্ধের গল্প। বাবার এই গল্পগুলো রোমাঞ্চে ভরা ছিল, কিন্তু একইসাথে যুদ্ধের বিভীষিকার এক নির্মম ছবি কল্পনায় ফুটিয়ে তুলত। ছোটবেলার একরকমের বিনোদন ছিল এই গল্পগুলো। আর বিনোদনের মাধ্যম বলতে তখন ছিল বাবার জাপানি প্যানাসনিক রেডিও। খবর, নাটক ছাড়াও আমাদের পছন্দের ছিল রেডিও চায়না।  

মাধ্যমিক শেষ করার পর যখন বাড়িতে এলো সাদাকালো নিপ্পন টিভি, তখন বিনোদনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। টিভিতে এক্স-ফাইলস আর হারকিউলিস দেখা শুরু হলো। এই সিরিজগুলো দেখে মফস্বলের ফুলবাড়ীতে বইয়ের দোকানে খুঁজে বেড়াতাম এ ধরনের গল্প। কোথাও ভিসিআর চললে একশান মুভির পোস্টারের নাম দেখে খাতায় টুকে রাখতাম। তখন থেকেই একশান মুভির প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়। কিন্তু যুদ্ধের সিনেমার প্রতি দুর্বলতা তৈরি হয়েছিল বাবার রোমাঞ্চকর গল্পগুলো থেকেই।  

সময় গড়াতে গড়াতে হাতে এলো কম্পিউটার। তারপর এক সময় ইন্টারনেট সংযোগের সুবাদে ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলো দেখতে শুরু করি। ২০১১ সালে এমনই কিছু সিনেমা দেখার মধ্যে *এনিমি অ্যাট দ্য গেটস* আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে।  

প্রথমবার সিনেমাটি দেখে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলো যেন কল্পনায় দেখতে পেলাম। এর পরেও সিনেমাটি বারবার দেখা হয়। ততদিনে ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ব্যক্তিগত পড়াশোনাও বেশ এগিয়েছে। জেনেছি স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ, হিটলারের সিক্স আর্মি, আর সোভিয়েতের রেড আর্মির কথা।  

স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ এবং ভাসিলি জেইতসিভের সাহসিকতা  
মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ছিল স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধ। ভোলগা নদীর তীরে ১৯৪২-৪৩ সালে এই যুদ্ধ হয়েছিল। সোভিয়েত স্নাইপার ভাসিলি জেইতসিভকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা *এনিমি অ্যাট দ্য গেটস* এই যুদ্ধের এক অসাধারণ চিত্রায়ণ। সিনেমার নাম নেওয়া হয়েছে উইলিয়াম ক্রেগের লেখা বই থেকে, যেখানে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।  

সিনেমাটিতে ভাসিলির সাহসিকতার গল্পকেই মূল ভিত্তি করা হয়েছে। এই স্নাইপার রাইফেল হাতে শত্রুদের ঘায়েল করে রেড আর্মির অন্যতম শক্তিতে পরিণত হন। ভাসিলি তার সাধারণ মানের মোসিন-নাগান্ত রাইফেল দিয়ে প্রায় ২৪২ জন প্রতিপক্ষ সেনাকে হত্যা করেন। অনেকের মতে, এই সংখ্যা পাঁচশরও বেশি।  

এনিমি অ্যাট দ্য গেটস সিনেমাটি যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এবং মানবিক বিপর্যয় ফুটিয়ে তুলেছে। তবে বাস্তবের ভাসিলি জেইতসিভের কিংবদন্তি দুই ঘণ্টার কোনো সিনেমায় পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সিনেমাটিতে দেখানো হয়, কীভাবে সোভিয়েত রেড আর্মি কমরেডদের হাতে পর্যাপ্ত রাইফেল না থাকা সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে যায়। একদিকে লাশের স্তূপ, অন্যদিকে সীমিত গোলাবারুদ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সোভিয়েত সৈনিকদের দৃশ্য গা শিউরে তোলে।  

জার্মান বাহিনী যখন ভাসিলির স্নাইপার বিগ্রেডের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তারা আরেকজন দক্ষ স্নাইপার পাঠায় তাকে হত্যা করতে। শুরু হয় দুই স্নাইপারের মধ্যে ভয়ঙ্কর লড়াই। ভাঙা ভবনের মধ্যে লুকিয়ে থেকে একে অপরকে পরাস্ত করার চেষ্টা যেন টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের মতো মনে হয়।  
 
যুদ্ধশেষে ভাসিলি রাষ্ট্রীয় বীরের মর্যাদা পান। তার ব্যবহৃত রাইফেলটি এখনো স্তালিনগ্রাদের ঐতিহাসিক জাদুঘরে সংরক্ষিত। সিনেমার শেষাংশে কিছু অতিরঞ্জিত রোমান্সের দিক থাকলেও, পরিচালক জ্যাঁ-জ্যাকস আন্নাউদ যুদ্ধের বিভীষিকাকে সফলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।  
  
এনিমি অ্যাট দ্য গেটস শুধু একটি সিনেমা নয়; এটি স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের ভয়াবহ ইতিহাসের একটি প্রতিচ্ছবি। যুদ্ধের এই গল্প হৃদয়কে নাড়া দেয়, বিশেষত যারা ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস এবং ভাসিলির মতো সাহসী যোদ্ধাদের জীবনের প্রতি আগ্রহী।

Monday, 22 August 2016

তিলোত্তমা তাল

আজকেও বাড়ি থেকে ফোন এলো প্রতিদিনের মতো। কিন্তু তুলি আজকে বেশ উচ্ছাসিত।আমাকে ফোন দিয়ে বলে ''মেজদাদা জানো আমি কি করছি?'' আমি বললাম ''কি করছিস?'' সে বলে আমি ''তাল ছেঁকে রস করছি। মা বলেছে তালের রস করে কাঁচের বয়ামে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে তোমার জন্য।'' যেহেতু ও একটু বেশি আনন্দিত সেহেতু আমি আরো একটু বেশি আনন্দিত হওয়ার অভিনয় করে জানতে চাইলাম তা কয়টা এনেছে ,কত হলো দাম ইত্যাদি ইত্যাদি তারপর  মা'র সাথে দুটি কথা বলে রেখে দিলাম। দেখতে পাচ্ছি মা'র চোখে চক চকে আনন্দ একটু পরেই চিক চিক করছে জলে দুই চোখ। অতি উৎসাহ নিয়ে তাল ছেকে থক থকে রস করে সেগুলোকে বয়ামে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিচ্ছে। আমি কবে আসবো সেই অপেক্ষায়।সময়ের সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ইট কাঠ পাথুরে শহরে এসে  হয়েছে আমাদেরও পরিবর্তন। কিন্তু বাবা-মা'রা?
 আজকাল পাকা তাল পাওয়া যায়না।এখানে ওখানে যদিও দুই একটি গাছ আছে সেগুলোর মালিকেরা পাকা তালের আশায় আর থাকে না। শহর থেকে লোক এসে কাঁচা তালের কাদি কিনে নেয়। তারপর সেগুলো শহরের অলি গলিতে শাঁস বিক্রি করে। তাই পাকা তাল পাওয়ার বিষয়টি আমাদের এলাকায় কিছুটা বড় ইলিশ মাছ পাওয়ার মতো ঘটনা বৈকি। অন্যদিকে আমাদের কিশোর বয়সে আম কুড়োনো আর তাল কুড়োনো নিয়ে মজার মজার ঘটনার মধ্যে তাল কুড়োনো ছিলো অন্যন্য। বাবার কড়া শাসনে আমরা কেউ কিছু করতে পারতাম না। যা করতাম তা লুকিয়ে লুকিয়ে। আর তালতলায় যাওয়া ছিল নিষেধ নাম্বার ওয়ানে। বাড়ি থেকে গ্রামের তালতলা খুব বেশি দূরে না। সরকার পট্টির পুকুরপাড় দিয়ে শ খানেক তালগাছ। প্রত্যেকটি তাল গাছ ভিন্ন ভিন্ন নামে, কেননা ভিন্ন ভিন্ন স্বাধ,গন্ধ আর বিভিন্ন আকারের তালের জন্য একেকটি গাছ একটি নাম ডাকা হতো। যেমন ক্ষিরসাপাতি গাছ ,হ্যাড়া গাছ, দুধ সাগর গাছ। দিনে ছেলেপেলেদের দল থাকতো তালতলায়। আমাদের তাল পাওয়ার কোনো চান্স থাকতো না  তাদের ভিড়ে তবুও মাঝে মাঝে যেতাম।একবার দাদা আমি প্ল্যান বের করি রাতে চুপি চুপি তাল কুড়োতে যাবো। কিন্তু রাতের বেলায় ছেলেরা মশাল জ্বালিয়ে সারারাত তালতলায় আড্ডা মারে। আমরা সুযোগ খুঁজতে থাকলাম। বেশ কিছুদিন বৃষ্টি নেই ভাদ্র মাসের গনগনে রোদ্র ভ্যাপসা গরমে সবাই যখন অতিষ্ঠ তখন আমরা দুজনে বেশ ফুর ফুরে কেননা যেকোনো সময় মুষলধারে বৃষ্টি নামবে আর এই গরমে সব পাকা তালের বোটা নরম হয়ে থপ থপ করে ঝরে  পড়বে।সত্যি সত্যি একদিন  বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির তোপে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস দুজনের কারোরই হলোনা। আমরা অপেক্ষা করছি বৃষ্টি থামার জন্য। মাঝ রাতে  বৃষ্টির তেজ কমতেই একটি বস্তা লাঠি আর টর্চ নিয়ে পেছন দরজা দিয়ে সোজা চলে গেলাম তালতলায়। টিপটিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তালতলায় টর্চ জ্বালিয়ে তালের সংখ্যা দেখে আমরা কিছুটা ভড়কে গেলাম। মাত্র একটি বস্তা কিন্তু তালের সংখ্যা পাঁচগুণ। কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে হটাৎ প্রবল বর্ষণে তাল কুড়োনীরা তখন ঘুমের দেশে আর আমরা দুজন ধীরে সুস্থে বেছে বেছে তাল একটা বস্তায় পুরে আর কিছু তাল অন্যত্র সরিয়ে রাখলাম পরে এসে নেওয়ার জন্য। পরেরদিন সেই তাল দেখি মা আশেপাশের সবাইকে বিতরণ করছে। এরকম তাল নিয়ে অনেক তেলেসমাতি হয়েছে সেসব এখন পুরোনো। মা হয়তো এসবের স্মৃতি চারণ করছে আর  তালের রস করে বয়ামে ভরে ফ্রিজে রাখছে আমাদের জন্য।শুধু কি তাল ? আম কাঁঠাল ছোট মাছ এমনকি আমার প্রিয় গিমা শাক (এক ধরনের তিতকুটে শাক ) পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে দেয় হটাৎ করে যদি আমি আসি বাড়িতে ।প্রত্যেকদিন ফোনে কথা হচ্ছে। অনেক প্রশ্নের ভিড়ে একটা কমন প্রশ্ন থাকবেই ,''কবে আসবি ''? ঘুরে ফিরে ''এইতো মনে হয় সামনের মাসে'' এই একটি উত্তর নানান ভাবে দেই।আর যখন ধরা গলায় বলে ''এই নবান্নে তোরা তিনজনেই মানে দাদা আমি জয়  চলে আসিস'' তখন সত্যি সত্যিই আমার তালগোল হয়ে যায় সবি।

প্রচন্ড শীতে পুরোনো ঘুপচি ঘরে তাল দিয়ে নানা পদের পিঠা তৈরী করছে মা। গত বছর ১৫.০১.২০১৬ তে তোলা ছবি।






Saturday, 30 July 2016

বার ফিরে আসে গোঁয়ার-গোবিন্দরা

প্রাচীন জনপদ গৌড় বা এখনকার আমাদের সিলেটে এক রাজা গোবিন্দ চন্দ্র বাস করতো। তিনি ছিলেন যেমন অনমনীয় তেমনি দুঃসাহসিক হটকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে মুসলিম সুলতানগণ তাকে গোঁয়ার-গোবিন্দ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।গোঁয়ার শব্দের অর্থ দুঃসাহসী ,মাস্তান প্রকৃতির ব্যাক্তি। হটকারী অর্থেও গোঁয়ার শব্দটি ব্যবহার করা হতো।স্বভাবতই এই তখন গৌড়ের সেই রাজাকে গোঁয়ার-গোবিন্দ নামটি যুৎসই ছিল।  তবে রাজা গোবিন্দ কত সালে কিংবা কত খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন জনপদ গৌড় বা আজকের সিলেট শাসন করেছিল সেটি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। কেননা গোবিন্দ চন্দ্র নামে বেশ কয়েকজন রাজা ছিল সেখানে। ধরেই নিচ্ছি তাদের মধ্যে একজন ছিল গোঁয়ার গোবিন্দ। অবশ্য আরো একটি প্রচলিত মতবাদ আছে এই গোঁয়ার গোবিন্দ নিয়ে। সেটি হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী স্থানে বাস করতো এক  আঁখ চাষি 'কুইয়ার' বা কয়ার বা গয়ার জাতিদের দলপতি গোবিন্দ চন্দ্র। শোনা কথা যে , এই দলপতি গোবিন্দ চন্দ্রের ছিল অসীম সাহস। ছিল কূটকৌশল আর বুদ্ধিবল।তার এই কূটকৌশল ও বুদ্ধিবলেই সিলেটের কোনো এক স্থানে তিনি ছোট এক রাজ্যের গোড়াপত্তন করেছিলেন। মনে করা হয় এই গয়ার জাতির  এই  দুঃসাহসিক দলনেতার কারণে অন্য রাজা-বাদশারা তাকে গোঁয়ার-গোবিন্দ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।কালের বিবর্তনে এই গোঁয়ার দলপতি কিংবা এই গোবিন্দ চন্দ্ররা হারিয়ে গেলেও তাদের রক্ত এখনো যে বইছে কিছু মানুষের ভেতর এটা বাস্তবিক। বিজ্ঞান তো তাই বলে। কয়েকদিন আগেও এমন এক গোঁয়ার- গোবিন্দের মিল খুঁজে পাই প্রাচীন জনপদ গৌড় তথা  এখনকার আমাদের সিলেটেরই একজন মন্ত্রী মহোদয়ের কথা শুনে। মাইন্ড করবেন না মন্ত্রী মহোদয় বিকজ ইউ ডোন্ট কেয়ার। আপনার মতে কয়লা যেমন সস্তা তেমনি আপনার কাছে সস্তা এই দেশ,মাটি ,মানুষ প্রকৃতি সব কিছুই। কিন্তু আমাদের কাছে আমাদের মা যেমন আপন তেমনি আমাদের এই দেশটিও অনেকবেশি দামি।সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লা ভিত্তিক যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা চিন্তা করছেন তা ভুলে যান।
এই সব গোঁয়ার-গোবিন্দরা আগেও ছিল এবং তাদের বংশ্বধরেরা এখনো আছে। এরাই যুগ যুগ ধরে বিভিন্নরকম হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে রক্ত ঝড়ায়। তারা সুকৌশলে ছলাকলায় ঠিক শকুনি মামাদের মত ভুলিয়ে ভালিয়ে ধ্বংসের পথ দেখায়। কিন্তু সময় এখন তাদের থেকে সরে এসেছে। এখন সময় আমজনতার। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমজনতা বুকের রক্তে গোঁয়ার-গোবিন্দদের হটকারী সিদ্ধান্ত রুখে দিয়ে সুন্দরবন,প্রকৃতি,পরিবেশ ,নদী-নালা  কে রক্ষা করবেই।  

Friday, 29 July 2016

ভি সি আর ,ভি সি আর , ভি সি আর

বিকেল থেকে মাইকে কেউ প্রচার করছে  ভি সি আর, ভি সি আর,ভি সি আর।স্থান চিন্তামন।  আজ সন্ধ্যে ছটায় যে ছবিখানি চলানো হবে তার নাম 'বেদের মেয়ে জোসনা' এবং রাতনটায় চালানো হবে ইন্ডিয়ান হিন্দি ছবি 'খল নায়ক ' টিকিট মাত্র ৫ টাকা ,৫ টাকা ,৫ টাকা। ভি সি আর ,ভি সি আর .......... . .। ছোটবেলায় প্রায়ই এরকম মাইকে এলাউন্স শুনতাম। তারপর বিকেলবেলা থেকে ঘুরা ঘুড়ি করতাম ভি সি আর দেখানোর বাড়িতে।মাইক টাঙিয়ে বড়োরা বাড়ির গেটের সামনে যে সিনেমা দেখাবে সেটির রঙিন পোস্টার জেনারেটরের ঝকঝকে বাতির নিচে ছোটরা ভিড় জমিয়েছে। একনাগাড়ে সিনেমার পোস্টারে তাকিয়ে তাকিয়ে মনে মনে সিনেমার কাহিনী দেখে যাওয়া আর একটু পর পর উঁকি ঝুঁকি মেরে দরজার ফাক দিয়ে দেখার চেষ্টা।
ভি সি আর
বাড়ির করা শাসনে কোনোদিন নিজে নিজে টিকিট কেটে ভি সি আর দেখার সাহস আমাদের ছিলোনা। হটাৎ কখনো কখনো ভি সি আর দেখার সৌভাগ্য হতো। বাড়ির সবাই যখন এক সঙ্গে দেখতে যেত তখন। একটু যখন বড় হলাম তখন আমরা ভি সি আর ভাড়া করে নিয়ে আসতে পারতাম সেটা শুধুমাত্র কালী পুজোর রাতে। কালো কিংবা সিলভার কালারের ভি সি আর সেট রঙিন টিভি , জেনারেটর সব ভাড়া করে আনতাম। সব সময়ই আমরা ভাড়া করতাম ফুনাই ভি সি আর সেটটি। কেননা ভি সি আর চলার সময় অন্য সব সেটের তুলনায় ফুনাই সেটটি কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই দেখা যেত সুন্দর। অবশ্য মাঝে মাঝে পুরাতুন ক্যাসেট চালানোর ফলে হেডে ময়লা জমলে নিজেরাই কাগজ দিয়ে হেড মুছে নিয়ে আবার প্লে করতাম। বলছিলাম নব্বই দশকের ভি সি আরের কথা। হয়তো অনেকে যারা এ লেখাটি পড়বে তারা বুঝতেই পারবে না আসলে ভি সি আর জিনিসটি কি। ৯৮ কি ৯৯ থেকে ভি সি আরের সেই স্বর্ণালী যুগ এক ধাক্কায় শেষ করে দেয় সিডি প্লেয়ার এসে। সিডি প্লেয়ার আসার পর থেকে ভি সি আরের কথা এক প্রকার ভুলেই যাই। গতকাল এক নিউজ পোর্টালে বিখ্যাত সেই  ভি সি আর সেট প্রুস্তুতকারক জাপানি ফুনাই  কোম্পানি তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছে। এতোদিনো যে তাদের ব্যবসা টিকে ছিল সেটাই জানা ছিলোনা আমার। ১৯৮৩ সালে জাপানের ফুনাই কোম্পানি তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। এমনকি এই ডিভিডি ব্লুরে র  যুগেও গত বছরে তারা ৭ লক্ষ ৫০ হাজার কপি বিক্রি করেছে। দিন দিন এর য্ন্ত্রাংশ পাওয়া দুস্কর হওয়ায় বদ্ধ হয়েই তারা এটি বন্ধ করতে চলেছে চলতি মাসেই। খবরটি নব্বই দশকের প্রজন্মের কাছে সত্যিই  নস্টালজিক। আমার কাছে আরো বেশি এই মুহূর্তে  আমার কানে বাজছে পাশের গ্রামে কানাবাচ্চুর বাড়ি থেকে কেউ একজন মাইকে চিৎকার করে বলছে - ভি সি আর ...........ভি সি আর ........... ভি সি আর ........... . স্থান রাধিকাপুর। ............আজ সন্ধ্যা ৬ টায়.............. 

Thursday, 21 July 2016

পাশে থেকেও নিরুদ্দেশ

বাড়ির সামনে বিশাল বটগাছ।  দাদাকে বললাম, শালিক পাখি মনে হয় আগের কোঠরেই বাসা বেঁধেছে। তুই একটু উঠে দেখতো ?
 ও বলে দাড়া দেখছি।
photo: pinterest Audubon California
হাফপ্যান্টের পকেট থেকে লাঠিম টা বের করে আমার কাছে রাখতে দিয়ে আশেপাশে লক্ষ্য রাখতে বলে সে উপরে উঠতে লাগলো। অন্য সময় ওর লাঠিম আমি ছুঁয়ে দেখার সাহস পেতাম না। তার উপর নতুন লাঠিম। গত বুধবার মাদিলাহাট থেকে ৩ টাকা দিয়ে কেনা।আমার এরকম সুন্দর লাঠিম নেই ওর লাঠিম দেখে কান্নাকাটি করাতে খগেন আমাকে একটা কাঠ কেটে লাঠিম বানিয়ে দিয়েছিলো। ওর লাঠিম পেয়ে আমি আশেপাশে লক্ষ্য করা বাদ দিয়ে তখন লাঠিম ঘোড়া নিয়ে ব্যাস্ত। এদিকে পাশের বাড়ির কালু চুপি চুপি বট গাছের আড়ালে এস দাঁড়িয়ে আমাদের কর্মকান্ড দেখছে। দাদা গাছ থেকে নেমে এসে জানালো একটি বাচ্চা আর একটি ডিম। বুজলি এবার একটাই বাচ্চা আর এটাকে যেমন করেই হোক এবার নিতেই হবে।
গতবছরে তিনটি ছানা দিয়েছিলো তার মধ্যে দুটিকে, আমাদের বাড়ির কাজের ছেলে খগেন পাচার করেছিল আর অপরটিকে নিতে গিয়ে কালুর সাথে আমাদের দুজনের বেশ ফাইট করতে হয়েছিল। কালুও আমাদের সমবয়সী কিন্তু ভয় শুধু ওর মাকেই। কোনোকিছু হলেই তার মা, আমার বাবার কাছে গিয়ে নালিশ করত। আর বাবা ছিল আমাদের কাছে বড় দুর্বলতা। প্রচন্ড শাসনে আমাদের রাখতো।প্রথম কালুর সাথে ঐ শালিক নিয়ে মারামারি তারপর পাকুড় গাছের নিচে ছোট গর্তটির জল ছেচে মাছ ধরা নিয়ে মারামারি।এরকম ঝামেলা লেগেই থাকতো। আমি বললাম,
চল এখন থেকে চলে যাই না হলে কালু দেখে ফেললে এবারও শালিক ছানা হাতছাড়া হয়ে যাবে।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই কালু হুংকার ছেড়ে সামনে এসে বলে
 'ঐ ওটা মুই দেকিচো তোমার আগে। ঐ বাচ্চাটা মোর।
 কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি হাতের লাঠিমের নতুন শান দেওয়া ছুঁচালো আলটি হাতের মুঠোয় শক্ত করে বাগিয়ে ধরলাম। আবারো আমাদের তৃতীয়বার ফাইট শুরু হতে যাচ্ছে। তাইনা দেখে কালু তড়িৎ গতিতে দু পা পিছনে সরেই রাস্তার পাশ থেকে মোটা একটি নতকুলুম মট করে ভেঙে প্রথম পজিশনে দাঁড়িয়ে আমাদের দুভাইকে ফাইট করার জন্য আহবান জানায়। গত বারের মাছ মারা নিয়ে মারামারির প্রতিশোধ তোলার সুযোগ কোনো ক্রমেই হাত ছাড়া করতে নারাজ সে। এরি মধ্যে খগেন কে আসা দেখে দাদার সাহস বেড়ে গেলো আর আমি কালু কে অচমকা ধাক্কা মারি।আমাদের তৃতীয় বারের কালুর সাথে ফাইট কিন্তু আর এগুতে দিলোনা খগেন।রাতে ভয়ে ভয়ে আছি যদি বাবার কানে যায় তাহলে আর রক্ষে নেই। ভালোই ভালোই রাত পর হতেই পরেরদিন আমরা ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম শালিক ছানার জন্য খাঁচা তৈরির জন্য।আমাদের বাসায় অনেক কাজের লোক। প্রবাস জ্যাঠা জমিজমা দেখে,ভজা দা বাজার খরচ আর খগেন দেখে সব গরুবাছুর। খগেনকে বলে লাভ নেই তাই ভজা দা কে বলতেই ভজা দা আমাদের কে আশ্বাস দেয় বাঁশ দিয়ে নতুন খাঁচা তৈরী করে সে এনে দিবে। তিনটি কাঁচের বোতল পরিষ্কার করে দাদা আমার হাতে দিয়ে ছিপি গুলো ফুটো করে নিতে বলে। ছিপিগুলো আমি জলাই (আলপিন) দিয়ে ছোট ছোট ছিদ্র করি বাতাস চলাচলের জন্য, যাতে শালিক ছানাকে খাওয়ানোর জন্য ফড়িংগুলো জীবিত থাকে।এই বোতল খগেনের জন্য দুইটি আর আমরা দুইজনে একটি। ওকে দিয়ে আমরা আশাবাদী একটু বেশি। কেননা  যখন গরু নিয়ে ও মাঠে যাবে তখন শালিকের জন্য সব ফড়িং ধরে নিয়ে আসবে।আমাদের মোটামুটি প্রুস্তুতি শেষ। কয়েকদিন পর আমাদের হাতে শালিক ছানা আসবে তাই উত্তেজনা উৎকন্ঠায় মার্বেলের কৌটা, বিয়ারিংয়ের গাড়ি,কাট কেটে বানানো লাঠিম, ঘুড়ি ,বাহারি ম্যাচের বাক্সের প্যাকেট কেটে বানানো তাস সব খেলনার  উপকরণ চৌকির নিচে বস্তা বন্দি করে রাখি।দুইজনে পালা করে লক্ষ্য রাখছি আবার যাতে কালু কোনো ক্রমেই এই ছানাটিকে না নিতে পারে। তারপর একদিন চুপি চুপি শালিক ছানা কে বাসায় নিয়ে আসি।খগেন রোজ মাঠ থেকে বড় বড় ফড়িং ধরে নিয়ে আসে বিনিময়ে ওকে আমার ফুলতোলা মার্বেল গুলো দিতে হয়। মার্বেল দিতে দিতে সব শেষ হয়ে এলো। তারপর দাদার লাঠিম চলে গেলো ,আমার বিয়ারিংয়ের গাড়ির তিনটি চাকা খুলে দিয়ে দিলাম।আমার সমস্ত খেলনা সামগ্রী দিয়ে শালিক ছানার জন্য ফড়িং এর যোগান দিচ্ছিলো খগেন। আস্তে আস্তে ছানাটি বড় হলো। রেশমি পালকের ডানায় যখন জোর এলো ততদিনে বাবাও কিন্তু শালিক ছানার জন্য বাজার থেকে পারুটি আর লাল পাকা মরিচ কেনা শুরু করেছে। ওকে খাঁচায় শুধু রাতে রাখতাম যাতে বিড়াল এসে না ধরে। ছানাটি কে আমরা শুধু শিস দেওয়া শিখিয়েছিলাম। মা কখনোই বন্দি করে রাখতে দিতো না যার ফলে ও মুক্ত হয়েই বেড়াতো। খুব আয়েশি ভঙ্গিতে আমাদের বাড়ির সব জায়গায় চলাফেরা করতো।হটাৎ, একদিন উধাও হয়ে যায় পাখিটি।চারিদিকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো খোঁজ পাওয়া গেলোনা।আমরা শালিক হারানোর শোকে খাওয়া দাওয়া একপ্রকার বন্ধ করেই দেই।   আমার আর দাদার শোক কাটানোর জন্য বাবা আমাদের জন্য নতুন ব্যাডমিন্টন  আর নেট নিয়ে এলো। আস্তে আস্তে শোক কেটে ভুলেই গেলাম শালিক পাখির ছানার কথা। প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস পরের কথা। একদিন বিকেলে দাদাকে নিয়ে ঘুড়ি বানাচ্ছিলাম ঠিক সেই সময় আমাদের সামনে উড়ে এলো হারিয়ে যাওয়া শালিক ছানাটি। আমি কাছে যেতেই সে উড়ে গিয়ে টিনের চালে বসে বিচিত্র ভাবে কর্কশে আওয়াজ করছিলো।আমাদের প্রিয় শালিক যে শুধু সিটি বাজাতো সে এখন কাক সহ বিভিন্ন পাখির কন্ঠ নকল করছে থেকে থেকে সেই কালুর কন্ঠ খস খসে বাজখাই আওয়াজ করছে। একই জায়গায় বসে এমন অদ্ভুত আচরন করছিলো।কিন্তু বেশিক্ষন না।পাশের বাড়ির কৌশিকদের হুলোটা আচমকা তাকে আক্রমন করে। চোখের পলকে শালিকটিকে ছিন্ন বিচ্ছন্ন করে দেয়। কয়েক ফোটা রক্ত কয়েকটা পালক আর একটা ডানার কিছু অংশ মাটিতে ঘুরতে ঘুরতে পরে।মনটা আবারো ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। এতদিন আমাদের বাড়ির পাশেই সেই কালুই যে পাখিটিকে বন্দি করে রেখেছিলো আর তাকে কর্কশে শব্দ শিখিয়েছিলো, কখনোই তা ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি কেউ ।এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। সত্যি সত্যিই ভুলে গেছি আমাদের সেই  শালিক পাখির কথা।এতো ব্যাস্ততার ভিড়ে ছেলেবেলার ফিকে হয়ে আসা স্মৃতি গুলো যে আবারো নতুন হয়ে আসবে তা কল্পনাতেও ভাবিনি। কয়েকদিন থেকে খবরের খবরের কাগজে একই রকম নিরুদ্দেশের খবর,ব্রেন ওয়াশ করার খবর ইত্যাদি  পড়তে পড়তে হঠাৎই আমার সেই শালিক পাখির ঘটনাটি মনে পরে গেলো নতুন করে । পাশে থেকেও নিরুদ্দেশ ঠিক যেমনটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। সেই কালুরাই এখনকার নতুন কালু যারা গোটাবিশ্বেই মূর্তিমান আতংকের নাম।      

Tuesday, 19 July 2016

যদি মন কাঁদে তুমি ফিরে এস

থ মেরে আছে আকাশ টা গত দু দিন থেকে। প্রচন্ড ভাবে চাইছি বৃষ্টি আসুক বৃষ্টি আসুক। ব্যালকনি থেকে শুধু নৈঋত থেকে বায়ু কোন পর্যন্ত দেখা যায়। ব্যালকনি থেকে মাঝে মাঝে ঘুরে যাচ্ছি মেঘগুলো দল বেঁধে এলো কিনা ?বৃষ্টি নামলো কিনা ?আবার মাঝে মাঝে সিটি ভিউয়ের সিঁড়ি ঘর থেকে ঈশাণ কোণ দেখে  আসছি আনাড়ি মেঘ গুলো সেখানে আড্ডা মারছে কিনা। না সেখানেও মেঘমালাদের দেখা নেই।বার বার আকাশ দেখছি যতদূর মনে হচ্ছে জাভা সাগর থেকে সব মেঘের দল সওয়ার হয়ে কুয়ালালামপুরের উপর দিয়ে সাউথ চায়না সাগরের মেঘদের সাথে বন্ধুত্ব করতে ছুটে চলেছে।আর এদিকে ইন্ডিয়ান সাগরের সব মেঘ উড়ে গিয়ে আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সব মেঘদের সাথে বিশাল বহর নিয়ে আরো উত্তরে হিমালয়ের আশেপাশে ঘাঁটি গেড়েছে।
মোবাইলের ওয়েদার ফোরকাস্ট তো তাই বলছে।এই ইট কাট পাথুরে শহরে বসে এক আমার ডাক শুনবেই বা কেন তারা। আষাঢ় চলে গেছে শ্রাবনের কয়েকটা দিন চলে গেছে বাংলাদেশে বৃষ্টি নেই। বাড়িতে কয়েকদিন থেকে ফোন দিয়ে মার কাছ থেকে শুনছি বৃষ্টি হচ্ছে কিনা। কোনো বৃষ্টি নেই আমার ছোট বোন তুলি গরমের জন্য সন্ধ্যা হলেই কান্নাকাটি করে। শুনে আমি হাঁসি থামাতে পারিনা।মা আমাকে ধমক দিয়ে বলে হাঁসার কি আছে ? এটা বাংলাদেশ। সত্যিই তো আমি ভুলেই গেছি লোড শেডিং এর কথা। মাত্র তিনটি বছরে প্রবাসে থেকে সব কি ভুলে যাচ্ছি ?এই তিনটি বছরে এক সেকেন্ডের জন্যও ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়া দেখিনি। আচ্ছা বিদ্যুতের কথা না হয় বাদ দিলাম। আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির কথা ?উফ সত্যিই ভুলে গেছি। আষাঢ় মাস অবধি বৃষ্টি না হলে আমি রহিম, সুমন আমরা সোনা ব্যাঙ খুঁজতে বের হতাম ব্যাঙ এর বিয়ে দেব বলে। দিনে ব্যাঙের বিয়ে আর রাতে বড়রা বের হতো মাস্তুল,লাঙ্গল মই নিয়ে হেড়ে গলা একসঙ্গে ছাড়তো আল্লা মেঘ দে পানি দে ........ তারপর পরেরদিন ঘুম থেকে সকালে উঠে দেখি সত্যিই সত্যিই বৃষ্টি হয়েছে একটুখানি। এমনটি প্রায়ই ঘটত।সকাল গড়িয়ে দুপুরে যখন আবার বৃষ্টি নামতো তখন আমাদের পায় কে ?
সোঁদা মাটির গন্ধ শুকতে শুকতে পাম্প ছাড়া চামড়া ছেড়া বল নিয়ে উদোম গায়ে দে দৌড় স্কুল মাঠে।আষাঢ় কিংবা শ্রাবনের প্রথম বৃষ্টিকে এভাবেই বরণ করতাম আমরা। তুলিকে ফোন দিয়ে বললাম, বৃষ্টি হচ্ছেনা যেহেতু, তাহলে এক কাজ কর, 'তোর বান্ধবীদের নিয়ে সোনাব্যাঙ ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দে'। এটা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।  মনে হয় এই প্রথম শুনলো যে বৃষ্টি নাহলে ব্যাঙদের বিয়ে দেওয়ার প্রথা ছিল একসময়। এক নম্বর তেলাপোকা  দুই নম্বর টিকটিকি আর তিন নম্বর হচ্ছে এই ব্যাঙদের নাকি ওর খুব ভয়।আমি বললাম ভুত কে ভয় করিস না। ও আরো জোরে হাঁসিতে ফেটে পড়ছে। ও বলে 'দাদা ফোনটা এখন রাখ'। আমি বললাম কেন এখন তো পড়াশুনার চাপ নেই , এতো ব্যাস্ততা কিসের ?ও বলে আমি হেনরী রাইডার হেগার্ডের "মন্টিজুমার মেয়ে" পড়ছি এখন তুই রাখ। ও মন্টিজুমার মেয়ে পড়ছে আর আমরা ভুতের গল্প নিয়ে পরে থাকতাম।শরৎ চন্দ্র আর নীহাররঞ্জন শেষ।হিমু আর মিসিরআলী তখন দাদার দখলে আমাকে ছুঁতেই দিতোনা।ওর বন্ধু মমিনুল, সরকার লাইব্রেরি থেকে ৫ টাকা দিয়ে বই নিয়ে আসতো তারপর ভাগাভাগি করে দুজনে  পড়ে আবার ফেরত দিয়ে আসতো।আমি পড়তে চাইলে ও বলতো এস এস সি টা শেষ হোক তারপর পড়িস।তারপর বইয়ের ভিতরে হিমু কিংবা মিসির আলীকে নিয়ে হারিকেনের চিমনিতে একটা সাদা কাগজ লাগিয়ে আবার ডুব মারতো। সত্যি কথা বলতে এস এস সির আগে আমার হাতে কখনোই হুমায়ুন আহম্মেদের বই আসেনি বা, ও আমাকে পড়তে দেয় নি। পরীক্ষার পরে যখন হুমায়ুন আহম্মদের বই এলো তখন বুঝতে পারলাম কেন ও বলতো পরীক্ষার পরে পড়িস। ঐ যে শুরু তারপর ২০১২ পর্যন্ত প্রত্যেকটি সময়ই আমরা তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতাম কখন হুমায়ুন আহম্মেদের বই আসবে। বৃষ্টি -মাটির সোঁদা গন্ধ, কদম ফুল কিংবা  জোসনার প্লাবন আর কোথাও খুঁজে পাইনা।আজ দেশের দুর্দিনে এমন একটা মানুষ নেই যে স্বপ্ন দেখাবে।যার বই পড়ে মানুষ শুধু ভালোবাসতেই শেখে আজ তার বড্ড বেশি প্রয়োজন।৯০ দশকের প্রজন্মের কাছে তার  বই পড়া আন্দোলন যেভাবে গড়ে উঠেছিল তা আজ নিভতে বসেছে আর সেই সুযোগে উগ্রবাদীরা এই প্রজন্ম কে মগজ ধোলাইয়ে ১০০ ভাগ সফল।২০১২ সালের শ্রাবন মাসে এই দিনে আমাদের প্রিয় হুমায়ুন আহম্মেদ সবাই কে ছেড়ে গেছে না ফেরার দেশে অথচ আমাদের ছেড়ে গেলেন না।  সকালে মা আমাকেই ফোন দিয়ে জানালো গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে আর পুকুর পারে কদম গাছে ফুলও ফুটেছে , তুলি তোদের বইয়ের আলমারির চাবিটা খুঁজে পেয়েছে আর  সেখান থেকে মোটা হলুদ রঙের বইটি নিয়ে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে পড়ছে তো পড়ছেই ।

Sunday, 17 July 2016

আগামী ৪৮ ঘণ্টা কেউ ঘর থেকে বাহির হবেন না

কয়েকদিন থেকে এই ম্যাসেজে ম্যাসেজে ফেসবুক ছেয়ে গেছে। বলা হচ্ছে যে, আগামী ৪৮ ঘন্টা আপনারা ঘর থেকে বের হবেন না। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে জঙ্গি রা আবার ঢাকার বড় বড় শপিং মল , রেস্টুরেন্ট সহ বড় বড় জনবহুল জায়গা গুলোতে হামলা করবে।  কেউ কেউ আবার রেফারেন্স টানছে আর্মি হেডকোয়াটার থেকে কেউ কেউ পুলিশ প্রশাসন থেকে আবার কেউ বা বলছে এম্বাসী থেকে। আমার ফেসবুকের অনেক ফ্রেন্ড দেখছি নির্দ্বিধায় সেগুলো শেয়ার করছে লাইক মারছে আবার কেউবা নানারকম মন্তব্য টানছে। তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম জনপ্রিয় সাইট ফেসবুকের কল্যানে এই সব পেনিক নিউজ গুলো সবার আগে চলে আসে আমাদের সামনে। আর আমরা সেগুলো দেদারছে শেয়ার করছি লাইক মারছি। আমাদের মনের ভেতরে এতটাই ভয় ঢুকিয়েছে জঙ্গিরা যে সেটার সত্য মিথ্যার ভাববার অবকাশ টুকু না দিয়ে সেই সব গুজবে আমরাও ভাসছি।  এখন কথা হলো কারা এসব নিউজ ছড়াচ্ছে , একটু ভেবে দেখেছেন ? অবশ্যই এসব সন্ত্রাসীদেরই  কাজ আর কিছু আবাল মার্কা অনলাইন সংবাদ পত্রিকা যারা সবসময় টি আর পি কামাইয়ের জন্য চটি গল্প ফেঁদে বা ১৮+ মার্কা গল্প লিখে নিউজ কাভার করে নাম কামায়। আর যারা এইসব নিউজ ছড়াচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্যই হলো পাবলিক কে ভয় দেখিয়ে ঘরের ভেতর রাখা কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাস্ত রাখা। পাবলিক যদি ভয় পেয়ে ঘরের ভেতরই থাকে তবে অফিস আদালতে কাজ হবেনা ,কলকারখানায় কোনো কলের চাঁকা ঘুরবে না,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কোনো বেচা বিক্রি হবেনা সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজবে যেটি সন্ত্রাসীদের কিংবা তথাকথিত জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য। আর অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাস্ত রেখে তারা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিবৃত্তে  চালাবে। আবারো ছক কষবে কোথায় কিভাবে কাপুরুষের মত হামলা করা যায়। গুজব ছড়িয়ে মানুষকে হত্যা করা যেখানে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে সবাইকে অন্তত এসব ব্যাপারে সজাক হলে অপশক্তির কখনোই সুবিধা করতে পারবে না। গুজব আসলেই একটা ফোবিয়া। মনে কি পরে আপনাদের Y2K  কথা ?

মূলত ২০০০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এই ধারণা নিয়ে জন্ম Y2K  . আর এর সূত্রপাত হয়েছিল খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।  তৎকালীন সময়ে ৯৯ সালের পরের সাল ২০০০ উল্লেখ করা ছিল ০০ দিয়ে।  আর তা নিয়ে সকলেরই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।  সবাই ভাবে যে ২০০০ সালে সকল কম্পিউটার আপনা আপনি অচল হয়ে যাবে, আর কম্পিউটারের এই বিগড়ে যাওয়াতে পৃথিবীর সকল কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ,পারমানবিক বোম্ব নিক্ষেপিত হবে।  আর এই গুজবটি এতই প্রভাব বিস্তার করে যে এমন  সাধারণ মানুষ সহ খোদ মার্কিন সরকার তারা খাদ্য মজুদকরন ,বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা,এটমিক বোমা হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা সহ কিভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায় তার সকল ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছিল। বিটিভি এবং সংবাদপত্রে নিয়মিত বুলেটিন প্রচার করছিলো। ২০০০ সাল এলো গেলো সব শ্রমই পন্ড শ্রম হয়ে গেলো।  ২০০১ সালের ৫ই মে' র কথা কে না জানে।

পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এমন উদ্ভট সংবাদে গোটা পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। দেশ বিদেশের প্রখ্যাত জোতিষী বিভিন্ন মিডিয়া তারা তাদের টি আর পি এক ধাপে কয়েকগুন বেড়ে নেয় শুধু ৫ই মে পৃথিবী ধ্বংসের কথা বলে। তাদের ভাষ্য মতে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ২.০৮ মিনিটে পৃথিবী চাঁদের বিপরীতে এবং সূর্যের একপাশে ৫ টি গ্রহ একই সরল রেখায় এসে দাঁড়াবে।  ৫ গ্রহের একই সরল রেখায় অবস্থান স্বল্প সময়ের জন্য স্থায়ী  হবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল।  বিশ্বের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং এস্ট্রোনমি পত্রিকা তাদের মে মাসের সংখ্যায় উল্লেখ করে ৫ই মে ২০০১ সাল ২৯ মহরম শুক্রবার পৃথিবীর মহাপ্রলয়ের আভাস দিয়েছিলেন।আর এটার সাথে যোগ হয়েছিল পবিত্র কোরান   মজিদে উল্লেখ করা মহাপ্রলয়ের কথা। কারন কোরান মজিদে উল্লেখ আছে কিয়ামত নাজিল হবে মহরম মাসে কোনো এক শুক্রবারে।  আর তাতেই কেল্লাফতে। মানব সমাজে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়।  কেউ আত্মহত্যা করেছিল মহাপ্রলয়ের ভয়ে ,কেউ তাড়াতাড়ি বিয়ে সেরেছিলো আর কেউবা জমি জমা সহায় সম্বল বিক্রি করে মনের যত আয়েস সব পূরণ করেছিল।যারা গুজব ছড়িয়েছিলো তারাও শতভাগই সফল।  এভাবে হরেক রকমের গুজব একটার পর একটা চলতেই থাকবে। তাই গুটিবাজিদের গুটির চাল যদি আপনি ধরতে না পারেন তাহলে ব্যার্থতা আপনাদের।
গুটিবাজদের থেকে সাবধান।

Saturday, 16 July 2016

Don't worry Saturday is coming.



Don't worry Saturday is coming. তাড়াহুড়া করে জেমস বন্ড আইল্যান্ডে যায় এবং সেখান থেকে ফিরে এসে ক্যামেরায় তোলা ছবি গুলো দেখছিলাম। আমি যে টি -শার্টটি পড়েছিলাম তাতে ঐ উপরের বাক্যটি লেখা ছিল যেটি এখন আমি খেয়াল করছি।

 আজকে শনিবার। মালয়েশিয়াতে শনিবার মানে আমার কাছে অন্যরকম ভালো লাগার দিন। পুরো শনিবারের রুটিন সাজাই  এক্কেবারে মনের মত করে। আর যদি শনিবারে বৃষ্টি আসে তাহলে তো কোনো কথাই নেই। এই মুহূর্তে বাসার ব্যালকনি থেকে আকাশ টাকে দেখছি পুরো অন্ধকার করে আছে। মনে প্রাণে চাইছি বৃষ্টি নামুক। গতকাল যখন ঘুম ভেঙে মোবাইল হাতে নেই দেখি ফ্রান্সের নিস নামক শহরে ফ্রান্সের জাতীয় দিবস 'বাস্তিল ডে'র অনুষ্ঠানে আবারো সন্ত্রাসী হামলায় অনেক মানুষের মৃত্যু। আর এবারের হামলাটি আরো অভিনব পদ্ধতিতে , হাজারো মানুষের মধ্যে বিশালাকার ট্রাক দ্রুতগতিতে মানুষের উপর দিয়ে ২ কিলোমিটার চলে যায়। ঘটনাস্হলেই ৮০ জন মানুষ ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়। আজ সকালে উঠেই দেখি তুরস্কে সেনারা বিদ্রোহ এবং সেখানেও শত শত মানুষ নিহতের খবর। চারিদিকে মৃত্যু আর মৃত্যু। বাবা বলত আমায়, বুঝলি যুদ্ধ আর কোথাও হবেনা। একবিংশ শতাব্দীতে তোরা যুদ্ধ দেখবিনা। এখন শুধু কোল্ড অয়ারের যুগ। আর ততদিনে ক্যাপাটিলিজমের  প্রথম পাঠ পড়া হয়েছে। বাবার সাথে মৃদু তর্ক চলত। আর এখন তো নতুন উৎপাত আই এস আই এস। কখন কোন সময়ে হুটহাট আক্রমন হবে কেউ বলতে পারছেনা। আজ শনিবারে বসে বসে লিখছি তো পরের শনিবারেই হতে পারে আমিও খবরের অংশ। হিসেবে করেও এখন মানুষের গড় আয়ু বের করতে পারিনা। পৃথিবীটা এতো সুন্দর কিন্তু অশান্তিতে ভরা। একদিন সত্যিই ঝড় থেমে গিয়ে পৃথিবী শান্ত হবে এই স্বপ্ন দেখি।