মনে করা হয় ১৭১৯ থেকে ১৭৩১ সালে আফ্রিকা এবং হাইতি থেকে ধরে আনা কৃষ্ণাঙ্গ দাস-দাসীদের মাধ্যমে সভ্য জগতে ভুডু চর্চার আবির্ভাব হয় এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স শহরকে ভুডু চর্চার পীঠস্থান বলা হয়ে থাকে। কথিত আছে হযরত মুহাম্মদ(সা:) এর বিরোধী পক্ষরা তার পুতুল প্রতিমূর্তি তৈরী করে তাতে সুচ ঢুকিয়ে মন্ত্রপূত করার পর সেটা রেখে দিয়েছিলো মরুভূমির এক কূপের মধ্যে ,এতে করে মুহাম্মদ(সা:) শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করেছিল এবং সেই পুতুল উদ্ধারের মাধ্যমে তিনি অসুস্থ অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করেন ,এমনটিই জানা যায় বিভিন্ন ইসলামিক বই থেকে।
ভুডু পুতুল তৈরী করা হয় দুই টুকরো কাঠি ,কাপড়চোপড় এবং এটি যার উপর প্রয়োগ করা হবে ,সেই ব্যাক্তির চুল ,নখ ,রক্ত বা চামড়ার কিছু অংশ দিয়ে। শোনা যায় যে ভূডূবিদ্যার সাহায্যে কবরের লাশ নাকি জ্যান্ত করে তাকে দিয়ে গোলামের মত খাটানো যায়। (এসব সোনা কথা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস একান্তই আপনার বিষয়)। ধারণা করা হয় কিংবদন্তি ভয়ঙ্কর পুতুল রবার্ট কিংবা অ্যানাবেল তৈরী হয়েছে ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানদের হাতে। রবার্ট দ্য ডল বা ভুতুড়ে পুতুল বর্তমানে ওয়েস্ট ফ্লোরিডা মার্টেল্লো যাদুঘরে রয়েছে।আর অন্যদিকে অ্যানাবেল রয়েছে ওয়ারেন এর অকাল্ট মিউজিয়াম। রবার্ট দ্য ডলের অশুভ প্রভাব বিস্তার শুরু গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে ১৯০৬ সালে। যখন শিল্পী রবার্ট ইউজেন অটো ফ্লোরিডা শহরের কেন্দ্রে বিখ্যাত আর্টিস্ট'স হাউস এ বসবাস শুরু করেন।প্রচুর বিত্তশালী ছিল অটো পরিবার।ফ্লোরিডার জীবনে বেশ মানিয়ে গেলেন তারা। স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে এই বাড়িতে থাকত তাদের ছোট্ট ছেলে আর বেশ কিছু চাকর বাকর। অটোরা নিয়ম কানুনের ব্যাপারে খুব কড়া ছিলেন।একদিন মিসেস অটোর বিছানায় বসার জন্য চাকরি গেল জ্যামাইকান সেবিকার। তবে যাবার আগে গেনেকে সে দিয়ে গেল হাতে বোনা একটা স্টাফ করা পুতুল।লোকে বলে জ্যামাইকান এই নারী ভুডু আর কালো জাদুর কৌশল জানত। পুতুলটা বানানো হয় গেনের চেহারার আদলে।ছোট্টগেনে খুব পছন্দ করলো সেটি। পুতুলটার নাম দেওয়া হলো রবার্ট,গেনের নামেরই প্রথম অংশ এটা। জ্যামাইকান সেবিকার কাছ থেকে পুতুলটা নেওয়ার পর থেকে আর ওটাকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিল না ছোট্ট গেনে। সবজায়গাতেই পুতুলটাকে নিয়ে যাওয়া চাই তার।শহরের লোকেরা প্রায়ই মিসেস অটো আর ব্যক্তিগত পরিচারকদের সঙ্গে গেনে আর রবার্টকে শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখতে লাগল। খাবার সময় গেনের পাশেই নিজের ছোট্ট চেয়ারটায় বসে রবার্ট।রাতে ঘুমে ঢুলতে থাকা ছেলেটার পাশে শুইয়ে দেওয়া হয় রবার্টকে।তবে ধীরে ধীরে গেনে আর তার পুতুলের সম্পর্ক একটা অশুভ দিকে মোড় নিল। গেনেকে তার খেলার ঘরে লাফালাফি,হৈচৈ করতে দেখা যায় কিছুক্ষন। তারপর মুহূর্তের বিরতি। এবার নিচু গলায় কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে আসে পরিচারকদের কানে। প্রথমে গেনের বালকসুলভ কন্ঠ,তারপরই সম্পূর্ন ভিন্ন একটা কন্ঠ। এই সময় থেকেই অস্বস্তি শুরু হলো বাড়ির চাকর-বাকর এমনকি মিসেস অটোর মধ্যেও। কখনো কখনো উদ্বিগ্ন মা আবিষ্কার করেন ছেলেটা জড়সড় হয়ে কামরার এক কোনায় বসে আছে। আর পুতুলটা বিছানায় কিংবা নিজের চেয়ারে বসে যেন একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ির জিনিসপত্র মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যেতে লাগল। মনে হয় যেন কেউ ওগুলো ছুঁড়ে ফেলেছে। বাবা মা খুব বকাঝকাও করলো তাকে। তবে প্রতিবারই সে সাফাই গায়,রবার্ট ওটা করেছে। পুতুল নড়তে-চড়তে শিখে,একটার পর একটা অকান্ড ঘটাচ্ছে এটা কে-ই বা বিশ্বাস করবে ?গেনের এক দাদীর পরামর্শে রবার্টকে গেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চিলেকোঠার একটা বাক্সে বন্দি করে রাখা হলো। তারপরের রাতেই বুড়ো মহিলাকে তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। তবে ভদ্রমহিলার অপ্রত্যাশিত এই মৃত্যুর পরপরই রবার্ট আবার ফিরে পেল গেনের সঙ্গীর জায়গা। তারপর থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ওটা থাকতে লাগল এই বাড়িতে। গেনে অটো বিয়ে করার পর তাদের সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না। একসময় উন্মত্ত আচরন শুরু করল মিসেস অটো। তারপর একদিন রহস্যময়ভাবে মারা যায়।একসময় মৃত্যু হলো গেনে অটোর।নতুন মালিক বাড়িটায় আসার পর আবার রবার্টের জায়গা হলো চিলেকোঠা একটা বাক্সে। কিন্তু প্রথমবারের মতই এই ব্যবস্থায় খুশি হতে পারল না অশুভ পুতুলটা। রাতগুলো দুর্বিষহ করে তুলল সে পরিবারটির জন্য। বাড়ির এখানে সেখানে তার উপস্থিতির নজির রাখতে শুরু করল। ঘটাতে থাকল একটার পর একটা অঘটন। দেরি না করে বাড়ি ছাড়লেন তারা। আর রবার্টের ঠাঁই হলো নতুন ঠিকানা, ওয়েস্ট ফ্লোরিডা মার্টেল্লো যাদুঘরে। যেখানে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয় তাকে। এখনো জাদুঘরে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা বলেন,রবার্ট সম্ভবত তার নতুন বাড়ির সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি।এক নারী পর্যটক তার চোখের সামনে পুতুলটার মুখের ভঙ্গী দেখে আঁতকে ওঠেন। ঠিক আগের মুহূর্তে ওটা হাসছিল,তারপরই বিরক্ত হয়ে ভ্রুকুটি করে। আবার কোনো কোনো পর্যটক এমনও দাবি করেছেন বিখ্যাত পুতুলটার ছবি তোলার পর কালো ফ্রেম ছাড়া আর কিছুই পাননি। রবার্ট যে জায়গাটায় এখন আছে সেখানে আলোর অবস্থা বেশ খারাপ। এত কম আলোতে ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন।কর্তৃপক্ষ জায়গাটকে আলোকিত করার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নিলেও কী এক অজানা কারনে সুবিধা হয়নি। আবার এধরনের গুজবও আছে ছবি তোলার আগে পুতুলটার কাছে ভদ্রভাবে অনুমতি চাইতে হয়। তা না হলে যে ছবি তুলবে তার উপর নেমে আসে রবার্টের অভিশাপ ।
![]() |
রবার্ট দ্য ডল |
No comments:
Post a Comment