এতো গেল প্রাচীন ভারতবর্ষের মিথের কথা। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে যদি নির্দিষ্ট কোনো স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে যদি কোনো কারণ ছাড়াই হাজার হাজার পাখি আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেয়।তাহলে সেটিকে কি বলবেন ?
ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ কে আত্মহত্যা বলা হয়। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা।প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে।যখন জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে বসে।এতো গেলো মানুষের কথা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ কে আত্মহত্যা বলা হয়। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা।প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে।যখন জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে বসে।এতো গেলো মানুষের কথা। মানুষ ছাড়াও অনেক প্রাণী আত্মহত্যা করে। যেমন গেলো কয়েকদিন আগেও নিউজিল্যান্ডের সমুদ্র সৈকতে একসঙ্গে ৩০০ তিমি মাছ আত্মহত্যা করেছে.শুধু কি তিমি গত বছর ভারতের ভোপালে হঠাৎ করে কয়েক হাজার বাদুর আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে যায়৷ এক বছর আগে এক লাখের মতো বাদুর অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই অবস্থা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ একটি স্থানে বিষয়ে সময়ে যদি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আগুনে আত্মাহুতি দে তাহলে বিষয়টি কিরকম দাঁড়ায় ?
কি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন তো? ভিউয়ার্স আমাদের আজকের এপিসোডটি এমনি এক রহস্যপূর্ণ স্থানের বিবরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে ,যার রহস্য এখনো অমীমাংসিত।
আপনারা দেখছেন ইনসাইডার মিস্ট্রী এন্ড হিস্ট্রি চ্যানেল। সাবস্ক্রাইব না করে থাকলে এখনই সাবস্ক্রাইব করুন
ভারতের অঙ্গরাজ্য আসামের উত্তর কাছাড় জেলায় জৈন্তিয়া পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটি গ্রাম জাতিঙ্গা। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামটি উত্তর কাছাড় জেলার সদর শহর হাফলং থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অমাবস্যার দিন এখানকার উপজাতিরা জঙ্গলের নির্দিষ্ট জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এই আগুন দেখে এই অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উড়ে আসে এবং সেই আগুনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করে।
জাতিঙ্গা থেকে হাফলং মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে। কিন্তু হাফলং-এ পরীক্ষামূলকভাবে পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য আগুন জ্বালানো হলেও পাখিরা সেদিকে যায়নি। তাছাড়া, শুধু নভেম্বর মাসের অমাবস্যা ছাড়া বছরের অন্য কোনো সময়ে জাতিঙ্গাতে আগুন জ্বালালে পাখিগুলো আসে না।
ঘটনার শুরুর দিকের কথা বলছি। বেশ কিছু বছর আগে কয়েকটি নাগা পরিবার জুম চাষের জন্য জাতিঙ্গা গ্রামে আসে। চাষবাস ভালো চললেও বুনো শুকর আর কয়োটে তাদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছিল। শেষমেশ ঐ বুনো প্রাণীদেরকে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে তারা একদিন খোলা যায়গায় আগুন জ্বালালো।
কিন্তু একি! আগুন দেখে আকাশ থেকে ঝাঁক বেঁধে নেমে আসতে থাকে শত শত পাখি। এসেই আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে। গ্রামবাসীরা ভাবতে শুরু করলো, এটা নিশ্চয়ই শয়তানের কাজ। পরবর্তীতে এইরকম ঘটনা আবারও কয়েকবার ঘটলে নাগা পরিবারগুলো জাতিঙ্গা থেকে চলে যায়। তবে এখন যারা জাতিঙ্গাতে আছেন, তারা মনে করেন ঈশ্বর পাখিগুলোকে খাবার জন্য তাদেরকে দান করেছেন।আলোর দিকে হঠাৎই আকর্ষিত হতে থাকে তারা। ছুটে যেতে থাকে আলোর উৎসমুখের দিকে। সে আলো হতে পারে প্রাকৃতিক, হতে পারে বৈদ্যুতিক। এ সময় তারা সম্মোহিত আচরণ করতে থাকে, যেন তারা নেশাগ্রস্থ, উন্মত্ত। উড়তে উড়তে হঠাৎ সামনে থাকা দেয়াল, গাছ বা থামের সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যায় তারা। কেউ বা অনেক উঁচু থেকে নিজেই লাফ দেয় নিচের দিকে এবং মৃত্যু বরণ করে! পাখিদের এই আত্মহননের কারণ নিয়ে হয়েছে অনেক গবেষণা। কেউ বলেছেন, কোন অশুভ শক্তি তাদেরকে বাধ্য করে এমনটা করতে। আবার কেউ বলেছেন, মৌসুমি বৃষ্টির কারণে ঘটে এমন। জরিপে অবশ্য এই বক্তব্যের সমর্থনে তথ্যও মেলে। দেখা যায় সে বছরই পাখির মৃত্যুহার বেশি হয় যে বছর বৃষ্টি বেশি হয়। পাখিদের মৃতদেহও জলাশয়ের কাছাকাছি পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। এযাবৎকালে সবচেয়ে বেশি পাখির মৃত্যু হয়েছে ১৯৮৮ সালে যে বার ঐ অঞ্চলে বৃষ্টিও হয়েছিল সবচেয়ে বেশি।
আসামের জাতিঙ্গা এলাকায় ঘটে পাখিদের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টার মাঝে এমন ঘটনা বেশি ঘটে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। এসময় যদি বৃষ্টিও হয় তাহলে পাখিরা আরও উত্তেজিত হয়ে যায়। ভারতীয় সরকার পাখিদের এই রহস্যময় আচরণের খোলাসা করতে উদ্যোগী হন। প্রখ্যত পাখি বিশেষজ্ঞ ডাঃ সেনগুপ্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডাঃ সেনগুপ্তা তার রিপোর্টে বলে, পাখিদের এ আচরণের পেছনে রয়েছে ঋতু এবং চৌম্বকীয় শক্তি। বৃষ্টির মৌসুমে সন্ধ্যার দিকে জাতিঙ্গার চৌম্বকীয়তা অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর অভিকর্ষণ শক্তি এবং কেন্দ্রিয়তার সাথে সম্পর্ক রয়েছে পাখিদের আকাশে ভেসে বেড়ানোর। ত্বরিত এই পরিবর্তন পাখিরা বুঝতে পারে না, বিভ্রান্ত হয়, আলোর দিকে আকর্ষিত হয়, দিক ভুল করে আশপাশের বস্তুর সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক শক্তি এবং আলোকে দায়ী করে ডাঃ সেনগুপ্তা পরামর্শ দেন বৃষ্টির মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এই সময়ে আলো নিভিয়ে রাখতে। এর ফলাফলও পাওয়া যায় আশানুরূপ। পরের বছর দেখা যায় ৪০ শতাংশ কম পাখি মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু এটি হয়ত অনেক কারণের মাঝে একটি। তাই বাঁচানো যায় নি সব পাখিকে। সমস্ত রহস্য এখনও উদঘাটিত হয় নি। গবেষণা এখনো চলছে।
No comments:
Post a Comment