Sunday, 17 July 2016

আগামী ৪৮ ঘণ্টা কেউ ঘর থেকে বাহির হবেন না

কয়েকদিন থেকে এই ম্যাসেজে ম্যাসেজে ফেসবুক ছেয়ে গেছে। বলা হচ্ছে যে, আগামী ৪৮ ঘন্টা আপনারা ঘর থেকে বের হবেন না। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে জঙ্গি রা আবার ঢাকার বড় বড় শপিং মল , রেস্টুরেন্ট সহ বড় বড় জনবহুল জায়গা গুলোতে হামলা করবে।  কেউ কেউ আবার রেফারেন্স টানছে আর্মি হেডকোয়াটার থেকে কেউ কেউ পুলিশ প্রশাসন থেকে আবার কেউ বা বলছে এম্বাসী থেকে। আমার ফেসবুকের অনেক ফ্রেন্ড দেখছি নির্দ্বিধায় সেগুলো শেয়ার করছে লাইক মারছে আবার কেউবা নানারকম মন্তব্য টানছে। তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম জনপ্রিয় সাইট ফেসবুকের কল্যানে এই সব পেনিক নিউজ গুলো সবার আগে চলে আসে আমাদের সামনে। আর আমরা সেগুলো দেদারছে শেয়ার করছি লাইক মারছি। আমাদের মনের ভেতরে এতটাই ভয় ঢুকিয়েছে জঙ্গিরা যে সেটার সত্য মিথ্যার ভাববার অবকাশ টুকু না দিয়ে সেই সব গুজবে আমরাও ভাসছি।  এখন কথা হলো কারা এসব নিউজ ছড়াচ্ছে , একটু ভেবে দেখেছেন ? অবশ্যই এসব সন্ত্রাসীদেরই  কাজ আর কিছু আবাল মার্কা অনলাইন সংবাদ পত্রিকা যারা সবসময় টি আর পি কামাইয়ের জন্য চটি গল্প ফেঁদে বা ১৮+ মার্কা গল্প লিখে নিউজ কাভার করে নাম কামায়। আর যারা এইসব নিউজ ছড়াচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্যই হলো পাবলিক কে ভয় দেখিয়ে ঘরের ভেতর রাখা কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাস্ত রাখা। পাবলিক যদি ভয় পেয়ে ঘরের ভেতরই থাকে তবে অফিস আদালতে কাজ হবেনা ,কলকারখানায় কোনো কলের চাঁকা ঘুরবে না,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কোনো বেচা বিক্রি হবেনা সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজবে যেটি সন্ত্রাসীদের কিংবা তথাকথিত জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য। আর অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাস্ত রেখে তারা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিবৃত্তে  চালাবে। আবারো ছক কষবে কোথায় কিভাবে কাপুরুষের মত হামলা করা যায়। গুজব ছড়িয়ে মানুষকে হত্যা করা যেখানে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে সবাইকে অন্তত এসব ব্যাপারে সজাক হলে অপশক্তির কখনোই সুবিধা করতে পারবে না। গুজব আসলেই একটা ফোবিয়া। মনে কি পরে আপনাদের Y2K  কথা ?

মূলত ২০০০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এই ধারণা নিয়ে জন্ম Y2K  . আর এর সূত্রপাত হয়েছিল খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।  তৎকালীন সময়ে ৯৯ সালের পরের সাল ২০০০ উল্লেখ করা ছিল ০০ দিয়ে।  আর তা নিয়ে সকলেরই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।  সবাই ভাবে যে ২০০০ সালে সকল কম্পিউটার আপনা আপনি অচল হয়ে যাবে, আর কম্পিউটারের এই বিগড়ে যাওয়াতে পৃথিবীর সকল কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ,পারমানবিক বোম্ব নিক্ষেপিত হবে।  আর এই গুজবটি এতই প্রভাব বিস্তার করে যে এমন  সাধারণ মানুষ সহ খোদ মার্কিন সরকার তারা খাদ্য মজুদকরন ,বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা,এটমিক বোমা হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা সহ কিভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায় তার সকল ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছিল। বিটিভি এবং সংবাদপত্রে নিয়মিত বুলেটিন প্রচার করছিলো। ২০০০ সাল এলো গেলো সব শ্রমই পন্ড শ্রম হয়ে গেলো।  ২০০১ সালের ৫ই মে' র কথা কে না জানে।

পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এমন উদ্ভট সংবাদে গোটা পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। দেশ বিদেশের প্রখ্যাত জোতিষী বিভিন্ন মিডিয়া তারা তাদের টি আর পি এক ধাপে কয়েকগুন বেড়ে নেয় শুধু ৫ই মে পৃথিবী ধ্বংসের কথা বলে। তাদের ভাষ্য মতে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ২.০৮ মিনিটে পৃথিবী চাঁদের বিপরীতে এবং সূর্যের একপাশে ৫ টি গ্রহ একই সরল রেখায় এসে দাঁড়াবে।  ৫ গ্রহের একই সরল রেখায় অবস্থান স্বল্প সময়ের জন্য স্থায়ী  হবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল।  বিশ্বের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং এস্ট্রোনমি পত্রিকা তাদের মে মাসের সংখ্যায় উল্লেখ করে ৫ই মে ২০০১ সাল ২৯ মহরম শুক্রবার পৃথিবীর মহাপ্রলয়ের আভাস দিয়েছিলেন।আর এটার সাথে যোগ হয়েছিল পবিত্র কোরান   মজিদে উল্লেখ করা মহাপ্রলয়ের কথা। কারন কোরান মজিদে উল্লেখ আছে কিয়ামত নাজিল হবে মহরম মাসে কোনো এক শুক্রবারে।  আর তাতেই কেল্লাফতে। মানব সমাজে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়।  কেউ আত্মহত্যা করেছিল মহাপ্রলয়ের ভয়ে ,কেউ তাড়াতাড়ি বিয়ে সেরেছিলো আর কেউবা জমি জমা সহায় সম্বল বিক্রি করে মনের যত আয়েস সব পূরণ করেছিল।যারা গুজব ছড়িয়েছিলো তারাও শতভাগই সফল।  এভাবে হরেক রকমের গুজব একটার পর একটা চলতেই থাকবে। তাই গুটিবাজিদের গুটির চাল যদি আপনি ধরতে না পারেন তাহলে ব্যার্থতা আপনাদের।
গুটিবাজদের থেকে সাবধান।

No comments:

Post a Comment