থ মেরে আছে আকাশ টা গত দু দিন থেকে। প্রচন্ড ভাবে চাইছি বৃষ্টি আসুক বৃষ্টি আসুক। ব্যালকনি থেকে শুধু নৈঋত থেকে বায়ু কোন পর্যন্ত দেখা যায়। ব্যালকনি থেকে মাঝে মাঝে ঘুরে যাচ্ছি মেঘগুলো দল বেঁধে এলো কিনা ?বৃষ্টি নামলো কিনা ?আবার মাঝে মাঝে সিটি ভিউয়ের সিঁড়ি ঘর থেকে ঈশাণ কোণ দেখে আসছি আনাড়ি মেঘ গুলো সেখানে আড্ডা মারছে কিনা। না সেখানেও মেঘমালাদের দেখা নেই।বার বার আকাশ দেখছি যতদূর মনে হচ্ছে জাভা সাগর থেকে সব মেঘের দল সওয়ার হয়ে কুয়ালালামপুরের উপর দিয়ে সাউথ চায়না সাগরের মেঘদের সাথে বন্ধুত্ব করতে ছুটে চলেছে।আর এদিকে ইন্ডিয়ান সাগরের সব মেঘ উড়ে গিয়ে আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সব মেঘদের সাথে বিশাল বহর নিয়ে আরো উত্তরে হিমালয়ের আশেপাশে ঘাঁটি গেড়েছে।
মোবাইলের ওয়েদার ফোরকাস্ট তো তাই বলছে।এই ইট কাট পাথুরে শহরে বসে এক আমার ডাক শুনবেই বা কেন তারা। আষাঢ় চলে গেছে শ্রাবনের কয়েকটা দিন চলে গেছে বাংলাদেশে বৃষ্টি নেই। বাড়িতে কয়েকদিন থেকে ফোন দিয়ে মার কাছ থেকে শুনছি বৃষ্টি হচ্ছে কিনা। কোনো বৃষ্টি নেই আমার ছোট বোন তুলি গরমের জন্য সন্ধ্যা হলেই কান্নাকাটি করে। শুনে আমি হাঁসি থামাতে পারিনা।মা আমাকে ধমক দিয়ে বলে হাঁসার কি আছে ? এটা বাংলাদেশ। সত্যিই তো আমি ভুলেই গেছি লোড শেডিং এর কথা। মাত্র তিনটি বছরে প্রবাসে থেকে সব কি ভুলে যাচ্ছি ?এই তিনটি বছরে এক সেকেন্ডের জন্যও ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়া দেখিনি। আচ্ছা বিদ্যুতের কথা না হয় বাদ দিলাম। আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির কথা ?উফ সত্যিই ভুলে গেছি। আষাঢ় মাস অবধি বৃষ্টি না হলে আমি রহিম, সুমন আমরা সোনা ব্যাঙ খুঁজতে বের হতাম ব্যাঙ এর বিয়ে দেব বলে। দিনে ব্যাঙের বিয়ে আর রাতে বড়রা বের হতো মাস্তুল,লাঙ্গল মই নিয়ে হেড়ে গলা একসঙ্গে ছাড়তো আল্লা মেঘ দে পানি দে ........ তারপর পরেরদিন ঘুম থেকে সকালে উঠে দেখি সত্যিই সত্যিই বৃষ্টি হয়েছে একটুখানি। এমনটি প্রায়ই ঘটত।সকাল গড়িয়ে দুপুরে যখন আবার বৃষ্টি নামতো তখন আমাদের পায় কে ?
সোঁদা মাটির গন্ধ শুকতে শুকতে পাম্প ছাড়া চামড়া ছেড়া বল নিয়ে উদোম গায়ে দে দৌড় স্কুল মাঠে।আষাঢ় কিংবা শ্রাবনের প্রথম বৃষ্টিকে এভাবেই বরণ করতাম আমরা। তুলিকে ফোন দিয়ে বললাম, বৃষ্টি হচ্ছেনা যেহেতু, তাহলে এক কাজ কর, 'তোর বান্ধবীদের নিয়ে সোনাব্যাঙ ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দে'। এটা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো। মনে হয় এই প্রথম শুনলো যে বৃষ্টি নাহলে ব্যাঙদের বিয়ে দেওয়ার প্রথা ছিল একসময়। এক নম্বর তেলাপোকা দুই নম্বর টিকটিকি আর তিন নম্বর হচ্ছে এই ব্যাঙদের নাকি ওর খুব ভয়।আমি বললাম ভুত কে ভয় করিস না। ও আরো জোরে হাঁসিতে ফেটে পড়ছে। ও বলে 'দাদা ফোনটা এখন রাখ'। আমি বললাম কেন এখন তো পড়াশুনার চাপ নেই , এতো ব্যাস্ততা কিসের ?ও বলে আমি হেনরী রাইডার হেগার্ডের "মন্টিজুমার মেয়ে" পড়ছি এখন তুই রাখ। ও মন্টিজুমার মেয়ে পড়ছে আর আমরা ভুতের গল্প নিয়ে পরে থাকতাম।শরৎ চন্দ্র আর নীহাররঞ্জন শেষ।হিমু আর মিসিরআলী তখন দাদার দখলে আমাকে ছুঁতেই দিতোনা।ওর বন্ধু মমিনুল, সরকার লাইব্রেরি থেকে ৫ টাকা দিয়ে বই নিয়ে আসতো তারপর ভাগাভাগি করে দুজনে পড়ে আবার ফেরত দিয়ে আসতো।আমি পড়তে চাইলে ও বলতো এস এস সি টা শেষ হোক তারপর পড়িস।তারপর বইয়ের ভিতরে হিমু কিংবা মিসির আলীকে নিয়ে হারিকেনের চিমনিতে একটা সাদা কাগজ লাগিয়ে আবার ডুব মারতো। সত্যি কথা বলতে এস এস সির আগে আমার হাতে কখনোই হুমায়ুন আহম্মেদের বই আসেনি বা, ও আমাকে পড়তে দেয় নি। পরীক্ষার পরে যখন হুমায়ুন আহম্মদের বই এলো তখন বুঝতে পারলাম কেন ও বলতো পরীক্ষার পরে পড়িস। ঐ যে শুরু তারপর ২০১২ পর্যন্ত প্রত্যেকটি সময়ই আমরা তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতাম কখন হুমায়ুন আহম্মেদের বই আসবে। বৃষ্টি -মাটির সোঁদা গন্ধ, কদম ফুল কিংবা জোসনার প্লাবন আর কোথাও খুঁজে পাইনা।আজ দেশের দুর্দিনে এমন একটা মানুষ নেই যে স্বপ্ন দেখাবে।যার বই পড়ে মানুষ শুধু ভালোবাসতেই শেখে আজ তার বড্ড বেশি প্রয়োজন।৯০ দশকের প্রজন্মের কাছে তার বই পড়া আন্দোলন যেভাবে গড়ে উঠেছিল তা আজ নিভতে বসেছে আর সেই সুযোগে উগ্রবাদীরা এই প্রজন্ম কে মগজ ধোলাইয়ে ১০০ ভাগ সফল।২০১২ সালের শ্রাবন মাসে এই দিনে আমাদের প্রিয় হুমায়ুন আহম্মেদ সবাই কে ছেড়ে গেছে না ফেরার দেশে অথচ আমাদের ছেড়ে গেলেন না। সকালে মা আমাকেই ফোন দিয়ে জানালো গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে আর পুকুর পারে কদম গাছে ফুলও ফুটেছে , তুলি তোদের বইয়ের আলমারির চাবিটা খুঁজে পেয়েছে আর সেখান থেকে মোটা হলুদ রঙের বইটি নিয়ে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে পড়ছে তো পড়ছেই ।
No comments:
Post a Comment