Monday, 4 November 2019

প্রকৃতির আইন ও বিচার ১

আমাদের এই বিশ্বচরাচর মানবসৃষ্ট নয়-এমন দৃশ্য অদৃশ্য বিষয় জীবন প্রাণ নিয়েই আমাদের প্রকৃতি অর্থাৎ প্রকৃতি বলতে সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে নির্দেশ করে।প্রকৃতি তার সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও ছন্দে চলে। পূর্ব ও পশ্চিমে সূর্য উদয় ও অস্ত যায়। একইভাবে দিন হয় রাত হয় বর্ষা শরৎ শীত আসে। দিন মাস বছর ঘোরে একই নিয়মে। এই চিরন্তন নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনা। সুশৃঙ্খল এই প্রকৃতির আইন আছে এবং বিচারের প্রক্রিয়াটি প্রকৃতি নিজেই করে।প্রকৃতি নির্জীব, চলৎশক্তিহীন ও সর্বংসহা মনে হলেও তা কিন্তু নয়,বরং প্রকৃতি নির্মম প্রতিশোধ গ্রহনকারী। প্রকৃতি কারো কোনো অনু পরিমান অপরাধ সহ্য করেনা।ঠিক সময়ে প্রকৃতি নিজের আদালতে অপরাধীর বিচার করে।আশেপাশে তাকালেই এরকম ভুরি ভুরি উধাহরন খুঁজে পাবেন।এরকম অনেক জ্বলন্ত উদাহরনের মধ্যে একটি নবাব সিরাজুদ্দৌলার সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তাদের প্রত্যেককেই নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে যা ইতিহাস সাক্ষী দেয়। ইংরেজদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে মীরজাফর নবাবের মসনদে বসলেও তাকে ‘ক্লাইভের গর্দভ’ হিসেবে অসম্মানজনকভাবে জীবন কাটাতে হয়েছে। মৃত্যুর আগে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয় এই বৃদ্ধ। তার শরীরে অসংখ্য ঘা ও ফোঁড়া হয়ে দূষিত রক্ত ও পুঁজে দুর্গন্ধ হতো।এভাবেই তার মৃত্যু হয় এবং মোহনলাল তাকে অভিশাপ দিয়েছিলো যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর বলে গালি দিয়েই যাবে। আজকে কেউ বিশ্বাস ঘাতকতা করলেই মানুষ মীর জাফর বলে গালি দেয়। আসুন দেখি অন্যদের বিচার প্রকৃতি কিভাবে করেছিল।
মীরজাফরের পুত্র মীরনের বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছিল।আর অন্যদিকে সিরাজের ষড়যন্ত্রী খালা ঘসেটি বেগমকে মীরন বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে।নবাব সিরাজের হত্যাকারী মোহাম্মদী বেগ পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কূয়োর মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়। পলাশীর অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী নবাব মীর কাসিমকে ইংরেজরা ক্ষমতাচ্যুত করার পর তিনি নিরুদ্দেশ হন। ৮ মে ১৭৭৭ সালে দিল্লীর কাছে সম্ভবত শোথ রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি অত্যান্ত দরিদ্রপিড়ীত ছিলেন। তার রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পদ, দুইটি শাল বিক্রি করে তার দাফনের কাজ সম্পাদন করা হয়।রায়দুর্লভ ও জগৎশেঠকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। রাজা রাজবল্লভকে গলায় বালুর বস্তা বেঁধে গঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। সেনাপতি ইয়ার লতিফ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। উমিচাঁদ প্রতিশ্রুত ২০ লাখ টাকা না পেয়ে শোকে পাগল হয়ে গিয়েছিল। পরে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ক্লাইভ বাংলা লুণ্ঠনের দায়ে বিলেতে দুর্নীতি মামলায় সাত বছর জেল খেটে কপর্দকহীন হয়ে পড়ে।তার মৃত্যু নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত তথ্যটি হচ্ছে পথে পথে ঘুরে নিজের ছুরি দিয়ে নিজের গলা কাটে।কুখ্যাত হলওয়েলের স্ত্রী তাকে রেখে অন্য যুবকের সাথে চলে গেলে সে আত্মহত্যা করে। এই ছিল পলাশীর ষড়যন্ত্রকারীদের নিশ্চিত পরিণতি।
প্রকৃতির বিচার শুধু ব্যাক্তি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা জাতিরাষ্ট্র যখন অবক্ষয় মূল্যবোধ অপরাধ আর সীমাহীন দুর্নীতিতে মজে উঠে তখন প্রকৃতি তার চরম শাস্তি দেয়।

কতদিন পরে!!

ঠিক কতদিন পরে বসেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। কিন্তু যখন ব্লগটি শুরু করেছিলাম তখন মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে রোজ একটু একটু করে লিখবো। অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শুরু করলেও তারপর নিজেই হাওয়া হয়ে গেলাম।
      ব্লগ খুলে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবলাম। মানুষ কত উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শুরু করে তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব উৎসাহ উদ্দীপনা কোনো এক ফাঁক গলে অজান্তে পালিয়ে যায়।কেউ বুঝতে পারে না। ব্লগ খুলে বসে ভাবছিলাম এসব কিছু। না কোনো মুভি রিভিউ না কোনো বই পড়া কিংবা ইন্ডিয়া থেকে দু দুবার ঘুরে আসার কোনো কিছুই কোনো স্ট্যাটাস না কোনো ফটো। এমনকি ফেসবুক থেকেও সাময়িক বিদায় নিয়েছি। প্রচুর সময় নষ্ট হয় তাই ফেসবুকে আর সময় দেই না।এই সময় নষ্ট করার ব্যাপারে এখন মনে হয় ভয়ানক বাড়াবাড়ি করছি। শরতের কাঁশফুল আর শিউলি ঝরে গেলো, শরৎ বিদায় নিলো চুপি চুপি।হেমন্তের সবুজ হলুদের কলাপাক ধানের  মাঠে ধোঁয়াশে এক রেখা খেলা করতে করতে হটাৎই শীত এসে গেলো তবুও ক্যামেরা নিয়ে একদিন বের হলাম না।
    সেদিন নয়ন এসে তার ক্যামেরায় তোলা বিশাল এক গোখরার ছবি আর পড়ন্ত বিকেলের সাদা কালো মেঘমালার ছবি আরো নানান বিষয়ের ছবি তুলে এনে আমায় দেখিয়ে গেলো। ও অনেকবার আমায় ডেকেছে বের হওয়ার জন্য কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বের হয়নি। কখনো প্রচন্ড রোদের অজুহাত কখনো সময়ের অজুহাত আরো নানান অজুহাত। সত্যিই মানুষের দুটি হাত ছোট হলেও অজুহাত অনেক বড়।এই অজুহাত ওই অজুহাত দিয়ে দিয়ে কতদিন পার করে দিলাম ভাবছি।
   সময় নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে যখন সাংঘাতিক সিরিয়াস তখন সত্যিই আমি কি করছি ?এমন প্রশ্ন করেও ছেড়ে দিলাম নিজেকে তারপর উত্তর হিসেবে হয়তো আঙ্গুল তুলে ওই বইটির দিকে তুলবো যেটি সব সময় ব্যাগে নিয়য়ে ঘুরছি। নেপোলিয়ন হিলের "থিঙ্ক এন্ড গ্রো রিচ " .বইটির সমন্ধে পরে লেখা যাবে কিন্তু সত্যি সত্যি আজকে একটু লিখতেই হবে,এই পন  নিয়ে বসে পড়েছি  কতদিন পরে।  

Saturday, 5 January 2019

ময়নার খোঁজে একদিন রূপনগরে

তৃতীয় কি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। নব্বই দশকের গোড়ার দিকের কথা। সেই বয়সে গোল্লারছুট, লুকোচুরি ,লাঠিম ঘোরানো ,ঘুড়ি উড়ার চেয়ে পাখিদের ছানা ফোটানোর মৌসুম এলেই আমরা ব্যাস্ত হয়ে পড়তাম, কোন গাছে শালিক পাখি বাসা বেঁধেছে,কোনটাতে পাখির ছানা ফুটেছে। কিন্তু আমাদের বাড়িতে পাখির ছানা গাছ থেকে নিয়ে আসা ছিল নিষিদ্ধ। যতবারই নিয়ে আসতাম বাবা লোকদিয়ে সেগুলোকে আবার রেখে আসতো আর প্রতিবারই বলতো এসব হবেনা।আর বার বার ময়না পাখির ছানা নিয়ে আসার কথা বলতো। ময়না পাখি সেসময় শুধু পড়ার বইতেই শুধু দেখেছি।বাস্তবে ময়না পাখি কখনোই দেখিনি। হটাৎ একদিন খবর এলো পাশের গ্রামে আর্মির বাড়িতে খাগড়াছড়ি থেকে ময়না পাখি এনেছে যা আবার মানুষের মতোই কথা বলে। ছেলেপেলের দলের সাথে আমিও গেলাম ময়না পাখি দেখতে। মানুষের মতোই কথা বলছে ময়না পাখি। একদিন দুদিন প্রায় প্রতিদিনই যেতাম কথা বলা ময়নার কাছে। সেই ছোটবেলা থেকেই ময়নার প্রতি ছিল গভীর টান।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলে যায়।ভুলে গেছি ময়না পোষার শখটিও। কিন্তু ছোটবেলার সেই অবচেতন মনের ভিতরে রয়ে যাওয়া শখটি হটাৎ ফিরে আসে একদিন ,যেদিন দাদার বন্ধু দশরথ দা সুনামগঞ্জ থেকে বেড়াতে এসেছিলো। কথাচ্ছলে আমি দশরথ দা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে সেখানে কি ময়না পাখি পাওয়া যায় ?দশরথ দা আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিল সেদিনই। মেঘালয় পাহাড় থেকে সে আমার জন্য ময়নার ছানা নিয়ে আসবে। কয়েকমাস পর সত্যি সত্যি আমাকে ফোন দিয়ে সুনামগঞ্জ আসতে বলে।২০১৩ সালের কথা ,আমি তখন স্কয়ার হাসপাতালে চাকরি করছি। দুদিনের ছুটি নিয়ে আমি রওনা দেই সুনামগঞ্জে ময়নার খোঁজে।   ময়নার খোঁজে সুনামগঞ্জে যাওয়ার ঘটনাটি এর আগে আমার আরেকটি ব্লগে লিখেছিলাম সেটিই ঘষে মেঝে কপি করে দিলাম এখানে।

১৫/০৬/২০১৩ আমার যাত্রার তারিখ । সকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে থেকে টিকিট কেটে উঠে বসি বাসে । ঢাকার জ্যাম পার হয়ে গাড়ি ছুটছে ময়মনসিং হাইওয়ে দিয়ে ।অচেনা নতুন জায়গা। জানালায় মুখ রেখে ছুটে চলা পরিবেশ প্রকৃতি দেখছি আর ভাবছি সত্যিই কি ময়নার দেখা পাবো ? দুপুর ১:৩০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম সুনামগঞ্জ । বাস থেকে নেমে চলে এলাম কলমাকান্দার বাস স্টপে ।মোবাইলে দশরথ দা সর্বক্ষণ আমাকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। একসময় বাধ্য হয়ে দশরথ দা কে বললাম “দাদা আমার রূপনগরের রাস্তা মুখস্থ হয়ে গেছে। আপনি টেনশন নিয়েন না”,আরে বাবা হাতে তো স্মার্ট ফোন আছে। ৩জি ৪জির যুগ তখন শুরু হয়নি। কিন্তু ২জি দিয়েই গুগল ম্যাপস ঠিক বলে দিচ্ছে আমার অবস্থান আর গন্তব্যের দূরত্ত্ব। কলমাকান্দার বাস স্টপে এসেই টিকিট কেটে উঠি লক্কর ঝক্কর মার্কা একটি বাসে।আমাকে যেতে হবে তাড়াতাড়ি কলমাকান্দায়। কেননা ৪ টার পরে আর কোনো ট্রলার বা নৌকা রূপনগরে যাবে না। ২ টার বাস ছুটে চলছে কলমাকান্দার পথে। গাড়ির নিয়মিত যাত্রীরা মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি আষাঢ়ের বিশাল মেঘমালার দিকে। আমার সাথে তারাও যেনো সওয়ার হয়েছে। আমি অবশ্য রূপনগর পর্যন্ত যাবো কিন্তু মেঘেরা আরো দূরে মেঘালয় কিংবা আসামের কোনো পাহাড়ে গিয়ে ঘাঁটি গাড়বে। ভাবতে ভাবতে ঘণ্টা দেড়েক পর আমি বাসের কন্ট্রাক্টর কে জিজ্ঞেস করলাম আর কতদূর ?উনি ঈষৎ হাঁসি দিয়ে জানালো কলমাকান্দায় প্রায় চলে এসেছি। কলমাকান্দায় চলে এসেছি মানে কলমাকান্দা থেকে মেঘালয়ের মেঘ পাহাড়ের খেলা দেখতে পাবো। দশরথ দা তো তাই বলেছে। আমি এবার পাশে বসা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম “এখান থেকে কি পাহাড় দেখা যায় ?” তিনি আমাকে সামনের মোড় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। সত্যিই বাসটি মোড় ঘুরতেই মেঘালয়ের অংশ বিশেষ আমার নজরে এলো।

 আমার প্রথম পাহাড় দেখা। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি কলমাকান্দায় চলে আসি। কলমাকান্দায় নেমে রিক্সা নিয়ে ট্রলার ঘাটে আসি।
বেশ কয়েকটি নৌকা বাধা আছে ঘাটে ,আমি এগুলোকেই ট্রলার বলছি। ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে ট্রলারে উঠছে। পড়ন্ত দুপুরে খরতাপে আমি ট্রলারের ছাদেই জায়গা করে নিলাম। এবার ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করি কেননা সামনে আমার বিশাল জল রাশি , আর দূরে মেঘের মত দেখা যায় মেঘালয় পর্বত মালা । জীবনে প্রথম পাহাড় দেখা আর টাঙ্গুর হাওড়ের বিশাল জলরাশির সাথে মেঘ পাহাড়ের মিতালি।
সমুদ্র সমান জলরাশি (তখন পর্যন্ত আমি সমুদ্রও দেখিনি )এডভেঞ্চারের প্রথম স্বাদ নিজেকে সিন্দাবাদ সিন্দাবাদ মনে হচ্ছে। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখছি হাওরের বিশালতাকে আর পুচকে ক্যানন দিয়ে কিছুক্ষন পর পর ক্লিক ক্লিক।
ঐযে দূরে, দূরে মৌন দাঁড়িয়ে মেঘের সাথে ছায়া ছায়া মেঘালয় পর্বতমালা।
ট্রলারের যাত্রীরা আমাকে দেখছে। মাঝে মাঝে টুক টাক প্রশ্ন করছে। আমিও টুক টাক উত্তর দিয়ে এখানকার পরিবেশ প্রকৃতি জানবার চেষ্টা করছি।
পড়ন্ত দুপুরের শান্ত বিলের জল । সাঁতার কেটে এগিয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক নৌকা …নৌকাতে বোঝাই ক্ষুদ্র বাসায়ীদের বাঁশ দিয়ে তৈরী মাছ ধরার উপকরণ।সামনে বর্ষাকাল তাই মাছ ধরার এই উপকরণ গুলোর দারুন চাহিদা পুরো হাওর অঞ্চলে।
হাওড়ের শান্ত নীল জলের আয়নায় মুখ দেখে নীল ওই দূরের আকাশ।

হাওড়ের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপের মতো গ্রাম।এসব গ্রামের লোকদের সাথে হাওড়ের গভীর মিতালি। বাবাকে নৌকাতে নিয়ে লগি মারছে ছেলে।
ছোট ছোট ডিঙি নৌকা গুলোতেও এখন ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। তর তর করে হাওরের জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে ডিঙি নৌকা।

হাওড় তার নিজের মতো করে সবাইকে আপন করে নিয়েছে পরম মমতায়।

হাওড় অঞ্চল প্লাবিত হলে অবশ্যইএখানকার প্রধান বাহন নৌকা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও স্বাচ্ছন্দে নৌকা বেয়ে এখানে ওখানে যাওয়া আসা করে।


ছোটো ছোটো দ্বীপের মতো গ্রামের প্রত্যেকের কাছে ছোট নৌকা থাকে। বাড়ীর সামনে বাঁধা ডিঙি নৌকা।



দূরে পাহাড়ের আড়ালে সূর্য্য মুখ লুকায়।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সাঁতার কেটে হাওরের জল ভেঙে হাঁস ঘরে ফিরছে। পানকৌড়ি সারাদিন ডুব শেষে নলখাগড়ার ঝোপে ঝিমুচ্ছে। প্রায় সাড়ে তিনঘন্টা নৌকাতে বসে হাওড়ের জীবন, প্রকৃতির রং রূপ দেখতে দেখতে গোধূলি বেলায় রূপনগরে চলে আসি।দশরথ দা ঘাটে এসে আগেই দাঁড়িয়ে ছিলো। কিছু দূরে সন্ধ্যে বেলায় ওনার বাসায় পৌঁছে গেলাম।
পরের দিন সকালে রূপনগরের রূপ দেখতে বের হই। মেঘালয়ের কোলে সুন্দর একটি গ্রাম রূপনগর।পাশেই ভারতীয় সীমান্তে টহলরত ভারতীয় বিএসএফ জওয়ানদের দেখে আমি কোনোমতেই আর সামনে যেতে চাইনা। কিন্তু দশরথ দা আমাকে একপ্রকার টেনে টুনে আমাকে নোমাসলান্ড পর্যন্ত নিয়ে যায়। কোনো কাঁটা তারের বেড়া নেই। রূপনগরের অনেক নারীদের দেখলাম হাতে বস্তা বা ব্যাগ জাতীয় কিছু নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে নোমাসলান্ড পেড়িয়ে পাহাড়ের জঙ্গলে ঢুকে যেতে। জিজ্ঞেস করে জানলাম তারা পাহাড়ে কাঁঠাল জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে। বিনিময়ে বিএসএফ প্রতিজনের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেয়।
রূপনগর ঘোরা শেষ হলে দশরথ দা আমাকে নিয়ে যায় একটি বাড়িতে যেখানে ময়নার ছানা রাখা আছে। ঐদিনই আমি ময়নাকে সাথে করে নিয়ে আসি ঢাকায়।সেও অনেক লুকিয়ে পালিয়ে অনেক কষ্টে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা। সেও এক লম্বা কাহিনী। পরে একদিন তা নিয়ে লিখবো। আপাতত দুদিনের ছুটি শেষ।

Wednesday, 24 January 2018

পাখিদের মৃত্যুপুরী জাতিঙ্গা-যে রহস্যের শেষ নেই।

প্রাচীন হিন্দু পুরাণে এক ব্রাহ্মণ আর তার সন্তানের কথা আছে যেখানে ভাগ্যের পরিহাসে  বিপদে পড়া এক ব্রাহ্মণ তার সন্তানকে নিয়ে গহীন জঙ্গলে গাছতলায় আশ্রয় নেন। সারারাত ক্ষুধায় কষ্ট করতে থাকা ব্রাহ্মণ আগুন জ্বালিয়ে কথা বলতে থাকেন তার সন্তানের সঙ্গে। তারা যে গাছটির নিচে বসে কথা বলছিলেন, সেই গাছের উপরই ছিল শুকসারি নামক এক পাখি পরিবারের বাস। গাছের নিচের মানুষ দুটোর কষ্টের কথা, ক্ষুধার কথা শুনে উপরের পাখি পরিবারের কনিষ্ঠ বাচ্চাটি হঠাৎ করেই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেয়, যাতে ব্রাহ্মণ আর তার সন্তান ঝলসানো পাখির মাংস খেয়ে ক্ষুধা মেটাতে পারে। বাচ্চা পাখির মাংস খেয়ে যখন পেট ভরলো না মানুষ দুটির, তখন একে একে বাবা-মা পাখি দুজনেই আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেয়।
এতো গেল প্রাচীন ভারতবর্ষের মিথের কথা। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে যদি নির্দিষ্ট কোনো স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে যদি কোনো কারণ ছাড়াই হাজার হাজার পাখি আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেয়।তাহলে সেটিকে কি বলবেন ?
ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ কে আত্মহত্যা বলা হয়। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা।প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে।যখন জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে বসে।এতো গেলো মানুষের কথা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ কে আত্মহত্যা বলা হয়। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা।প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে।যখন জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে বসে।এতো গেলো মানুষের কথা। মানুষ ছাড়াও অনেক প্রাণী আত্মহত্যা করে। যেমন গেলো কয়েকদিন আগেও নিউজিল্যান্ডের সমুদ্র সৈকতে একসঙ্গে ৩০০ তিমি মাছ আত্মহত্যা করেছে.শুধু কি তিমি গত বছর ভারতের ভোপালে হঠাৎ করে কয়েক হাজার বাদুর আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে যায়৷ এক বছর আগে এক লাখের মতো বাদুর অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই অবস্থা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ একটি স্থানে বিষয়ে সময়ে যদি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আগুনে আত্মাহুতি দে তাহলে বিষয়টি কিরকম দাঁড়ায় ?
কি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন তো? ভিউয়ার্স আমাদের আজকের এপিসোডটি এমনি এক রহস্যপূর্ণ স্থানের বিবরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে ,যার রহস্য এখনো অমীমাংসিত।
আপনারা দেখছেন ইনসাইডার মিস্ট্রী এন্ড হিস্ট্রি চ্যানেল। সাবস্ক্রাইব না করে থাকলে এখনই সাবস্ক্রাইব করুন

ভারতের অঙ্গরাজ্য আসামের উত্তর কাছাড় জেলায় জৈন্তিয়া পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটি গ্রাম জাতিঙ্গা। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামটি উত্তর কাছাড় জেলার সদর শহর হাফলং থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অমাবস্যার দিন এখানকার উপজাতিরা জঙ্গলের নির্দিষ্ট জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এই আগুন দেখে এই অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উড়ে আসে এবং সেই আগুনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করে।
জাতিঙ্গা থেকে হাফলং মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে। কিন্তু হাফলং-এ পরীক্ষামূলকভাবে পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য আগুন জ্বালানো হলেও পাখিরা সেদিকে যায়নি। তাছাড়া, শুধু নভেম্বর মাসের অমাবস্যা ছাড়া বছরের অন্য কোনো সময়ে জাতিঙ্গাতে আগুন জ্বালালে পাখিগুলো আসে না।
ঘটনার শুরুর দিকের কথা বলছি। বেশ কিছু বছর আগে কয়েকটি নাগা পরিবার জুম চাষের জন্য জাতিঙ্গা গ্রামে আসে। চাষবাস ভালো চললেও বুনো শুকর আর কয়োটে তাদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছিল। শেষমেশ ঐ বুনো প্রাণীদেরকে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে তারা একদিন খোলা যায়গায় আগুন জ্বালালো।
কিন্তু একি! আগুন দেখে আকাশ থেকে ঝাঁক বেঁধে নেমে আসতে থাকে শত শত পাখি। এসেই আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে। গ্রামবাসীরা ভাবতে শুরু করলো, এটা নিশ্চয়ই শয়তানের কাজ। পরবর্তীতে এইরকম ঘটনা আবারও কয়েকবার ঘটলে নাগা পরিবারগুলো জাতিঙ্গা থেকে চলে যায়। তবে এখন যারা জাতিঙ্গাতে আছেন, তারা মনে করেন ঈশ্বর পাখিগুলোকে খাবার জন্য তাদেরকে দান করেছেন।আলোর দিকে হঠাৎই আকর্ষিত হতে থাকে তারা। ছুটে যেতে থাকে আলোর উৎসমুখের দিকে। সে আলো হতে পারে প্রাকৃতিক, হতে পারে বৈদ্যুতিক। এ সময় তারা সম্মোহিত আচরণ করতে থাকে, যেন তারা নেশাগ্রস্থ, উন্মত্ত। উড়তে উড়তে হঠাৎ সামনে থাকা দেয়াল, গাছ বা থামের সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যায় তারা। কেউ বা অনেক উঁচু থেকে নিজেই লাফ দেয় নিচের দিকে এবং মৃত্যু বরণ করে! পাখিদের এই আত্মহননের কারণ নিয়ে হয়েছে অনেক গবেষণা। কেউ বলেছেন, কোন অশুভ শক্তি তাদেরকে বাধ্য করে এমনটা করতে। আবার কেউ বলেছেন, মৌসুমি বৃষ্টির কারণে ঘটে এমন। জরিপে অবশ্য এই বক্তব্যের সমর্থনে তথ্যও মেলে। দেখা যায় সে বছরই পাখির মৃত্যুহার বেশি হয় যে বছর বৃষ্টি বেশি হয়। পাখিদের মৃতদেহও জলাশয়ের কাছাকাছি পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। এযাবৎকালে সবচেয়ে বেশি পাখির মৃত্যু হয়েছে ১৯৮৮ সালে যে বার ঐ অঞ্চলে বৃষ্টিও হয়েছিল সবচেয়ে বেশি।

আসামের জাতিঙ্গা এলাকায় ঘটে পাখিদের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টার মাঝে এমন ঘটনা বেশি ঘটে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। এসময় যদি বৃষ্টিও হয় তাহলে পাখিরা আরও উত্তেজিত হয়ে যায়। ভারতীয় সরকার পাখিদের এই রহস্যময় আচরণের খোলাসা করতে উদ্যোগী হন। প্রখ্যত পাখি বিশেষজ্ঞ ডাঃ সেনগুপ্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডাঃ সেনগুপ্তা তার রিপোর্টে বলে, পাখিদের এ আচরণের পেছনে রয়েছে ঋতু এবং চৌম্বকীয় শক্তি। বৃষ্টির মৌসুমে সন্ধ্যার দিকে জাতিঙ্গার চৌম্বকীয়তা অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর অভিকর্ষণ শক্তি এবং কেন্দ্রিয়তার সাথে সম্পর্ক রয়েছে পাখিদের আকাশে ভেসে বেড়ানোর। ত্বরিত এই পরিবর্তন পাখিরা বুঝতে পারে না, বিভ্রান্ত হয়, আলোর দিকে আকর্ষিত হয়, দিক ভুল করে আশপাশের বস্তুর সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক শক্তি এবং আলোকে দায়ী করে ডাঃ সেনগুপ্তা পরামর্শ দেন বৃষ্টির মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এই সময়ে আলো নিভিয়ে রাখতে। এর ফলাফলও পাওয়া যায় আশানুরূপ। পরের বছর দেখা যায় ৪০ শতাংশ কম পাখি মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু এটি হয়ত অনেক কারণের মাঝে একটি। তাই বাঁচানো যায় নি সব পাখিকে। সমস্ত রহস্য এখনও উদঘাটিত হয় নি। গবেষণা  এখনো চলছে।



Saturday, 25 November 2017

বরিস্কা দ্যা ইন্ডিগো বয় ফ্রম মার্স

পৃথিবীতে যুগে যুগে কত যে আজগুবি আর বিচিত্র ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার কোনো হিসেব নেই। সময়ে অসময়ে নানা ধর্মগুরুদের ভবিষ্যত বাণী দিয়ে মানুষকে করেছে বিভ্ৰান্ত তার কোনো শেষ নেই। এরকম হাজারো ভবিষ্যত বাণী বাবা ভাঙ্গা থেকে নস্ত্রাদামুস কিংবা মায়া ক্যালেন্ডার সহ অনেক কিছুর কথা নেট ঘাটলেই চলে আসে সামনে। ইদানিং এরকমই একটি বিস্ময় জাগানিয়া ঘটনা সম্প্রীতি নেট দুনিয়ায় আলোড়ন তুলেছে আর তা হচ্ছে  ২১ বছরের রাশিয়ান এক জাতিস্বর বালক বরিস্কা কিপ্রিয়ানোভিচ। জাতিস্বর রাশিয়ান এই বালক নিজেকে দাবি করছে সে মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বরিস্কার সমন্ধে।

২০০৮ সালে ''বরিস্কা দ্যা ইন্ডিগো বয় ফ্রম মার্স '' এক ডকুমেন্টারির মাধ্যমে তার ঘটনা প্রথম জনসমক্ষে আসে। ছোটবেলা থেকেই সে মঙ্গলগ্রহে পূর্ব জন্মের কথা বলে আসছে। ১৯৯৬ সালে রাশিয়ার ভলগ্রোগ্রাড রিজিওনের ভ্লঝাই শহরে জন্ম নেওয়া বরিস্কা ছোট থেকেই আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের থেকে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম ছিল। পেশায় চিকিৎসক তার মা কিপ্রিনিয়াওভিচ তার ছেলের জন্মগ্রহণের সময়কার ঘটনা সম্পর্কে বলেন ,"এ সব এত দ্রুত ঘটে গেল যে আমি কোন প্রসব যন্ত্রনাও পেলাম না। যখন নার্সরা শিশুটিকে আমাকে দেখালো, সে আমার দিকে পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। একজন শিশুরোগ-চিকিৎসক হিসাবে আমি জানি নবজাতক এভাবে কোনকিছুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকাতে পারে না"। হসপিটাল থেকে বাড়ি আসার পর সে তার নবজাতকের বেশ কিছ অস্বাভাবিক জিনিষ লক্ষ্য করতে শুরু করলেন। মাত্র ১৫ দিন বয়স থেকেই সে তার মায়ের হাত শক্ত করে ধরতে পারে। সে সাধারণত কাঁদে না, এমনকি তার কোন রোগেও ধরে না। সে অন্যান্য শিশুদের মত বড় হতে থাকলেও মাত্র ৮মাস বয়সেই স্বাভাবিক মানুষের মত করে কথা বলা শিখে যায়। বরিস্কার বয়স যখন ২ বছরে তখন সে নীল ও বেগুনি রং-এ মিশ্রিত এমন সব অদ্ভুত ছবি আঁকতে শুর করে যা প্রথমত বিমূর্ত মনে হতো। সাইকোলজিস্টরা বললো শিশুটি খুব সম্ভবত তার আশে পাশে যাদেরকে দেখে এসব তাদেরই ছবি। বয়স৩ না পেরোতেই সে তার বাবা-মাকে মহাবিশ্বের গল্প বলা আরম্ভ করে। সে বলতে পারে সমস্ত গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহের সংখ্যা ও নাম, গ্যালাক্সিদের সংখ্যা ও নাম। বাবা-মা বলে,"আমরা প্রথমত ভয় পেয়ে যাই, তবে বরিস্কার দেওয়া তথ্য সত্য কিনা তা যাচায়ের নিমিত্তে বাজার থেকে জোতির্বিদ্যার উপর বই কিনে আনি, এবং এতে দেখা যায় বরিস্কার দেওয়া তথ্য পুরোপুরি সঠিক"। ২০০৪ সালে বরিস্কা প্রথমবার রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের নজরে আসে।  রাশিয়ান একাডেমি অবসায়েন্সের ইন্সটিউট অব আর্থ ম্যাগেনটিসম এ্যান্ড রেডিও ওয়েভসের বিশেষজ্ঞরা শিশু বরিস্কার ওরা (প্যারানরমাল) ফটোগ্রাফ নেয়।এবং তারা তাকে অসম্ভব বুদ্ধিমত্তার অধিকারিহিসাবে দেখতে পায়। এ সম্পর্কে অধ্যাপক ভ্লাডিলাভ লিউগোভেন্কো বলেন, "একটি থিওরি আছে, যেটা অনুসারে মানুষের দুই ধরণের মেমরি আছে: ওয়ার্ক এবং রিমোট মেমরি। মানুষের ব্রেনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হলো অভ্যন্তরীণভাবে এবং বাহ্যিকভাবে অর্জিত অভিজ্ঞতা, আবেগ এবং চিন্তাভাবনাগুলোকে মহাবিশ্বের একক তথ্য কেন্দ্রে জমা করে রাখা। শুধুমাত্র হাতেগোনা কয়েকজন মানুষই সেখান থেকে তথ্য গ্রহন করতে পারে। বরিস্কা তাদেরই একজন"।এ্যাস্ট্রোনমিতে প্রচুর নলেজ তার।
বরিস্কা মনে করতে পারে তার মঙ্গল-জীবনের অনেক কিছু। মঙ্গল গ্রহের প্রাণী সম্পর্কে সে বলেছে, শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য তারা কার্বন ডাই অক্সাইডের উপর নির্ভরশীল। উচ্চতায় তারা মানুষের চেয়ে অনেক লম্বা। মঙ্গলবাসী অমর বলে দাবি করে সে। তার কথায় ৩৫ বছর হয়ে গেলেই মঙ্গলবাসীদের বয়স আর বাড়ে না। বিজ্ঞান প্রযুক্তির দিক থেকেও মঙ্গলবাসীরা অনেক দূর এগিয়ে।বহুদিন আগে থেকেই তারা বিভিন্ন নক্ষত্র মন্ডলে এমনকি টাইম ট্রাভেল করতেও সক্ষম। বরিস্কা জানায় পূর্ব জন্মে নিজেও সে একজন মহাকাশচারী পাইলট ছিল। সেই সময়ে সে পৃথিবীতেও এসেছিলো। প্রাচীন মিসরীয় সভ্ভতার সাথেও নাকি মঙ্গলবাসীদের সুসম্পর্ক ছিল। তার মতে পৃথিবীতে জীবনের নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে যদি কোনোদিন গিজা পিরামিডের সামনে স্ফীংস মূর্তির তালা খোলা সম্ভব হয়। আর সেই তালা খোলার কৌশল স্ফীংসের একটি কানের নিচেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সে। মঙ্গল গ্রহের সেই সভ্যতার অস্ত্বিত্ব নেই। বরিস্কার কথা অনুযায়ী হাজার হাজার বছর আগে মঙ্গলবাসীদের নিজেদের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে এক সময়ের প্রাণ চঞ্চল মঙ্গলের এখন সেই অবস্থা। বিধ্বংসী সেই যুদ্ধ মুছে দিয়েছে পৃথিবী থেকে অনেক এগিয়ে থাকা এক সভ্যতার চিহ্ন। তাকে অনেকবারই অনেকের সামনেই দিতে হয়েছে সাক্ষাতকার। প্রজেক্ট ক্যামেলটও হাজির হয়েছে তার কাছে।
 বরিস্কার মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণও আছে। এ্যাস্ট্রোনমির গুরুদেব ষ্টিফেন হকিংসও বরিস্কার প্রতিভা বিশ্বাস করে । ইউনিভার্স নিয়ে বরিস্কার নলেজকে প্রশংসাও করেছে হকিংস। তিনি বলেন, " বরিস্কা মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছে নাকি পৃথিবীই তার একমাত্র আবাস সেটা বিষয় নয় বরং মহাবিশ্বের উপর বরিস্কার যে নলেজ রয়েছে সেটা আমার কল্পানার বাইরে"।