আমাদের এই বিশ্বচরাচর মানবসৃষ্ট নয়-এমন দৃশ্য অদৃশ্য বিষয় জীবন প্রাণ নিয়েই আমাদের প্রকৃতি অর্থাৎ প্রকৃতি বলতে সমগ্র সৃষ্টি জগৎকে নির্দেশ করে।প্রকৃতি তার সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও ছন্দে চলে। পূর্ব ও পশ্চিমে সূর্য উদয় ও অস্ত যায়। একইভাবে দিন হয় রাত হয় বর্ষা শরৎ শীত আসে। দিন মাস বছর ঘোরে একই নিয়মে। এই চিরন্তন নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনা। সুশৃঙ্খল এই প্রকৃতির আইন আছে এবং বিচারের প্রক্রিয়াটি প্রকৃতি নিজেই করে।প্রকৃতি নির্জীব, চলৎশক্তিহীন ও সর্বংসহা মনে হলেও তা কিন্তু নয়,বরং প্রকৃতি নির্মম প্রতিশোধ গ্রহনকারী। প্রকৃতি কারো কোনো অনু পরিমান অপরাধ সহ্য করেনা।ঠিক সময়ে প্রকৃতি নিজের আদালতে অপরাধীর বিচার করে।আশেপাশে তাকালেই এরকম ভুরি ভুরি উধাহরন খুঁজে পাবেন।এরকম অনেক জ্বলন্ত উদাহরনের মধ্যে একটি নবাব সিরাজুদ্দৌলার সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তাদের প্রত্যেককেই নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে যা ইতিহাস সাক্ষী দেয়। ইংরেজদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে মীরজাফর নবাবের মসনদে বসলেও তাকে ‘ক্লাইভের গর্দভ’ হিসেবে অসম্মানজনকভাবে জীবন কাটাতে হয়েছে। মৃত্যুর আগে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয় এই বৃদ্ধ। তার শরীরে অসংখ্য ঘা ও ফোঁড়া হয়ে দূষিত রক্ত ও পুঁজে দুর্গন্ধ হতো।এভাবেই তার মৃত্যু হয় এবং মোহনলাল তাকে অভিশাপ দিয়েছিলো যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর বলে গালি দিয়েই যাবে। আজকে কেউ বিশ্বাস ঘাতকতা করলেই মানুষ মীর জাফর বলে গালি দেয়। আসুন দেখি অন্যদের বিচার প্রকৃতি কিভাবে করেছিল।
মীরজাফরের পুত্র মীরনের বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছিল।আর অন্যদিকে সিরাজের ষড়যন্ত্রী খালা ঘসেটি বেগমকে মীরন বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করে।নবাব সিরাজের হত্যাকারী মোহাম্মদী বেগ পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কূয়োর মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়। পলাশীর অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী নবাব মীর কাসিমকে ইংরেজরা ক্ষমতাচ্যুত করার পর তিনি নিরুদ্দেশ হন। ৮ মে ১৭৭৭ সালে দিল্লীর কাছে সম্ভবত শোথ রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি অত্যান্ত দরিদ্রপিড়ীত ছিলেন। তার রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পদ, দুইটি শাল বিক্রি করে তার দাফনের কাজ সম্পাদন করা হয়।রায়দুর্লভ ও জগৎশেঠকে গঙ্গায় নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। রাজা রাজবল্লভকে গলায় বালুর বস্তা বেঁধে গঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। সেনাপতি ইয়ার লতিফ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। উমিচাঁদ প্রতিশ্রুত ২০ লাখ টাকা না পেয়ে শোকে পাগল হয়ে গিয়েছিল। পরে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ক্লাইভ বাংলা লুণ্ঠনের দায়ে বিলেতে দুর্নীতি মামলায় সাত বছর জেল খেটে কপর্দকহীন হয়ে পড়ে।তার মৃত্যু নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত তথ্যটি হচ্ছে পথে পথে ঘুরে নিজের ছুরি দিয়ে নিজের গলা কাটে।কুখ্যাত হলওয়েলের স্ত্রী তাকে রেখে অন্য যুবকের সাথে চলে গেলে সে আত্মহত্যা করে। এই ছিল পলাশীর ষড়যন্ত্রকারীদের নিশ্চিত পরিণতি।
প্রকৃতির বিচার শুধু ব্যাক্তি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা জাতিরাষ্ট্র যখন অবক্ষয় মূল্যবোধ অপরাধ আর সীমাহীন দুর্নীতিতে মজে উঠে তখন প্রকৃতি তার চরম শাস্তি দেয়।
No comments:
Post a Comment